অভিনেতা দিলদারকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস
আশি ও নব্বই দশকের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা দিলদার। চলচ্চিত্রে যার উপস্থিতি মানে হাসি। তার অভিনয় দেখে দুঃখ ভুলেছেন কোটি কোটি দর্শক। পর্দায় তাকে দেখে হাসবেন না এমন দর্শক পাওয়া কঠিন। যতক্ষণ তিনি অভিনয় করবেন, ততক্ষণই মুগ্ধ হয়ে সবাই শুধু তাকেই দেখবেন। ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘হাসির রাজা’ খ্যাত এই অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকী ছিল শনিবার (১৩ জুলাই)। ২০০৩ সালের এই দিনে ৫৮ বছর বয়সে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই অভিনেতা।
দিলদারের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার রুমা এবং ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ সোমা। মাসুমা দন্তচিকিৎসক। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। মাসুমা পরিবার নিয়ে থাকেন গুলশানের নিকেতনে। ছোট মেয়ে জিনিয়া বসুন্ধরা এলাকায় থাকেন। তার স্বামী পাঁচ বছর আগে ক্যানসারে মারা গেছেন। তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল।
দিলদার চলে যাওয়ার দুই দশক পর জানা গেল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এখনও প্রযোজকদের কাছে লাখ লাখ টাকা পান এই অভিনেতা বলে জানিয়েছেন অভিনেতার বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার রুমা।
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি জানিয়ে মাসুমা আক্তার রুমা জানান, এই অভিনেতা মারা যাওয়ার সময় বিভিন্ন প্রযোজকের কাছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন। পরিবারের দুঃসময়ে এই টাকা তারা পাননি।
তিনি বলেন, বাবা কখনও কারও কাছে এক-দুবারের বেশি টাকা চাইতেন না। এজ ন্য তিনি বেশির ভাগ সময় পারিশ্রমিক অগ্রিম নিয়ে নিতেন। কিন্তু অনেক সময় পরিচিত, কাছের প্রযোজকদের কাছে অগ্রিম টাকা চাইতেন না। এভাবে বাবার পাওনা ৮০ লাখ টাকা জমা হয়েছে। ওই সময় প্রযোজকদের কাছ থেকে বাবার পাওয়া ৩৫ লাখ টাকার চেক বাসায় ছিল, সেই টাকাও ওই সময় আমরা পাইনি।
ক্যারিয়ারে ‘আবদুল্লাহ’ নামের একটি ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছিলেন দিলদার। জনপ্রিয় এ কৌতুক অভিনেতাকে নায়ক হিসেবেও সমাদর করেছিলেন দর্শক। ‘আবদুল্লাহ’ হয়েছিল সুপারহিট।
ছবিটির কথা উল্লেখ করে অভিনেতার বড় মেয়ে বলেন, ছবির প্রযোজকের সঙ্গে বাবার চুক্তি হয়েছিল, যদি ছবিটি সিনেমা হলে চলে, তাহলে তারা বাবাকে ১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেবেন, ব্যর্থ হলে কোনো টাকা পাবেন না। কারণ, নায়ক হিসেবে বাবাকে নিয়ে প্রযোজক ঝুঁকি নিচ্ছেন। বাবাও রাজি হন। পরে ‘আব্দুল্লাহ’ ছবিটি হিট হলেও বাবা ছবির পারিশ্রমিক পাননি। এখন কে টাকা দিলো বা না দিলো, এগুলো নিয়ে আমাদের আর কোনো দাবিদাওয়া নেই। আফসোসও নেই। বাবা নেই, এগুলো আমরা বলতেও চাই না। সবার কাছে একটাই চাওয়া, আপনারা বাবার জন্য দোয়া করবেন।
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন দিলদার। এর মধ্যে রয়েছে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘শুধু তুমি’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘অজান্তে’, ‘প্রিয়জন’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘নাচনেওয়ালী’সহ আরও অনেক জনপ্রিয় সিনেমা।
একজীবনে অভিনয়ের কারণে দিলদার দর্শকের ভালোবাসা অর্জনের পাশাপাশি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। ২০০৩ সালে তিনি ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
মন্তব্য করুন