এবার অভিনেত্রী দোয়েলের অভিযোগে মুখ খুললেন নির্মাতা
মডেল ও অভিনেত্রী দিলরুবা দোয়েল। শোবিজে দোয়েল ম্যাশ নামেও পরিচিত তিনি। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত ‘আলফা’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রচারে আসেন মডেল ও অভিনেত্রী দিলরুবা দোয়েল। সে সময় সিনেমাটি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এরপর এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’, নুরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুটি’, বন্ধন বিশ্বাসের ‘লাল শাড়ি’, আহমেদ হুমায়ুনের ‘পটু’সহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে দর্শক দেখেছেন তার অভিনয়ের ঝলক। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক, ওয়েব সিরিজ ও মডেলিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই সুন্দরী।
এদিকে, ‘চন্দ্রাবতী কথা’ সিনেমার নির্মাতা পরিচালক এন রাশেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে পারিশ্রমিক বকেয়ার অভিযোগ আনলেন অভিনেত্রী দিলরুবা হোসেন দোয়েল। সম্প্রতি এক টেলিভিশনে এসে এ অভিযোগ করেন তিনি। ২০২১ সালে মুক্তি পায় ছবিটি সরকারি অনুদান পায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে। ওই সিনেমার পারিশ্রমিক এখনও বুঝে পাননি দোয়েল।
তিনি বলেন, ‘সরকারি অনুদানের চন্দ্রাবতী কথা সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে সিনেমাটির সহপ্রযোজনায় যুক্ত হয়েছিল বেঙ্গল ক্রিয়েশনস। এটার ডিজিটাল রাইট কিনেছে চ্যানেল আই। সিনেমাটি মুক্তি দিতে সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। মুক্তির তিন বছর হয়ে গেলেও এ সিনেমার কলাকুশলী, আর্টের লোক, কস্টিউমের লোক, প্রোডাকশনের লোক টাকা পায় না কেন? পরিচালকের তো সমস্যা হয়নি। এ বছর তিনি আরও একটি সিনেমার জন্য অনুদান পেয়েছেন।
এতদিন পর অভিযোগ আনার কারণ ব্যাখ্যা করে দোয়েল বলেন, ‘ওই সময়ে এই কথাগুলো চাইলেও বলা যায়নি। আর কাকে বলতাম? অভিনয়শিল্পী সংঘ? আমি তো কোনো সংগঠনের সদস্যই না। অভিনয়শিল্পী সংঘ আসলে কী করছে? কয়টা শিল্পীর ব্যক্তিগত সমস্যায় এগিয়ে এসেছে? একজন শিল্পী মরে গেলে তারা হয়তো মিলাদ দিচ্ছেন। কিন্তু একটা শিল্পী বেঁচে থাকা অবস্থায় কতবার মারা যায়—এটা কি আমরা কখনো ভেবেছি? চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিরও একই অবস্থা। আমি যখন অপু বিশ্বাসের ‘লাল শাড়ি’ সিনেমার শুটিং করতে যাই, সে সময় আমাকে বলা হয় শিল্পী সমিতির সদস্য হতে হবে। আমি ওই সংগঠনের মেম্বার কেন হব? এফডিসির কোনো লোক আমাদের কাজে ডেকেছে? তারা আগেই ধরে নিয়েছে আমরা মিডিয়াপাড়ার লোক, তাদেরটা সিনেমাপাড়া। তাহলে তাদের সংগঠনের সদস্য কেন হব? লিয়াজোঁ করার জন্য?’
এদিকে অভিনেত্রী দোয়েলের পর সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নির্মাতা রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি আজ প্রায় ৩৫ বছর ধরে স্বাধীন সিনেমা আন্দোলনের সাথে যুক্ত। আজ ৬ বছর হলো চন্দ্রাবতী কথা সিনেমা শেষ করেছি, সবাই জানেন যে বেঙ্গল এ ছবির সম্পূর্ণ প্রযোজনা স্বত্ব নিয়ে নিয়েছে। এখানে পুরো সিনেমার ব্যয় প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার মধ্যে আমার অনুদানের অর্থ ৩৫ লাখ টাকা আর আমার ব্যক্তিগত ও ধার করা উৎস থেকে আরও ২০ লাখ টাকা জোগাড় করেছি, বাকিটা বেঙ্গলের। আর এর বিনিময়ে ওরা সিনেমার সম্পূর্ণ স্বত্ব নিয়ে নিয়েছে—এটাও সবাই জানেন। আর চ্যানেল আইকেও ওটিটি স্বত্ব ওরাই দিয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত কোলো ক্রু বা কাস্ট আমাকে ফোনে বা মেসেজে জানায়নি যে এখনও ছবির কাজে তাদের বকেয়া পাওনা আছে।’
পাশাপাশি সিনেমাটির সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের একটি এক্সেল ফাইল যোগ করেছেন নির্মাতা। যেখানে ক্রু ও কাস্ট পেমেন্ট বাবাদ ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা বকেয়া দেখাচ্ছে, যার কিছু এর মধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে।
রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘বেঙ্গলের প্রত্যেকটি সিনেমা প্রকল্পের জন্য একজন করে ইপি নিযুক্ত ছিলেন এবং সবগুলো সিনেমার পেমেন্ট হিসাব-নিকাশ তারাই পেমেন্ট করেছেন। এখানে আমার করণীয় আসলে কী ছিল? আর আমার যেসব ক্রু-কাস্ট আমার পরিচিত ছিলেন, তারা হয়তো কেউ কেউ দেরি করে পেমেন্ট নিয়েছেন। আর আমি এমন কোনো ব্যস্ত পরিচালক নই যে আমাকে পেমেন্টসের জন্য ফোন করা বা মেসেজে যোগাযোগ করা যেত না। কিন্তু কেউ মেসেজ করে উত্তর পাননি, এমনতো হবার কথা নয়! আর আমাকে না পেলেও বেঙ্গলের তো অফিস ছিল, মনে করতে পারি, সেখানে দোয়েল নিজে গিয়েও পেমেন্ট নিয়ে এসেছেন একবার। এখানে তো যে কেউ আসতে পারতেন। আর সিনেমা রিলিজের পর আমি যেখানে ইন্টারভিউ বা শোতে গিয়েছি, সেখানে প্রায় সবগুলোতে দোয়েল নিজেও গিয়েছেন, তখনও তো তিনি বা কেও বকেয়া পান বলে জানাননি। আর আমি এত শক্তিশালীও কেউ নই যে কাউকে ধমকে বা শক্তি প্রদর্শন করে কারও মুখ বন্ধ করে রাখব। তবুও আপনাদের মাধ্যমে জানাতে চাই, কাগজপত্রের বিপরীতে কারও যদি আমার সিনেমার কাজে কোনো টাকা বকেয়া থেকে থাকে তাহলে আমি নিজে চেষ্টা করব সেটা পরিশোধ করতে। আর যারা আমাকে চেনেন তারাও অন্তত জানেন, যেকোনো সিনেমার কাজ আমি সর্বোচ্চ সৎ থাকার চেষ্টা করি। তবে অজান্তে কোনো ভুল হয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে সরকারি অনুদান পায় ‘চন্দ্রাবতী কথা’। এরপর ২০১৮ সালে ছবিটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২০১৯ সালে এটি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়। পরবর্তীতে সেন্সর নিয়ে জটিলতা তৈরি হলেও সেটি মীমাংসিত হয়ে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এটি সিনেমা হলে মুক্তি পায়।
আরটিভি /এএ/এআর
মন্তব্য করুন