যে কারণে আটকে গেল সালমান-সামিরার প্রেমকাহিনি
ঢাকাই চলচ্চিত্রের আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ। নব্বই দশকে ধূমকেতুর মতো তার আবির্ভাব তার। মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা অবস্থায় সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয় নানা রহস্য। সালমানের পরিবারের অভিযোগের তীর তার স্ত্রী সামিরার দিকে।
এদিকে, ভালোবেসে সামিরাকে বিয়ে করেছিলেন অকালপ্রয়াত নায়ক সালমান শাহ। চট্টগ্রামের একটি ফ্যাশন শোতে ১৯৯০ সালের ১২ জুলাই তাদের পরিচয়। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা, প্রেম এরপর বিয়ের সিদ্ধান্ত। পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার জন্য আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন সালমান! ১৯৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর গোপনে বিয়ে করেন সালমান-সামিরা। তাদের সেই প্রেমকাহিনি নিয়ে সিনেমা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন নির্মাতা ছটকু আহমেদ। নাম ‘স্বপ্নের রাজকুমার’। তবে সালমানের মা নীলা চৌধুরীর আপত্তিতে ভেস্তে গেল সিনেমার কাজ। সালমানের মা লন্ডন থেকে টেলিফোন করে সিনেমাটি বানাতে নিষেধ করেছেন বলে জানান এই নির্মাতা।
ছটকু আহমেদের কথায়, ‘২০২০ সালে সোহান (সালমান শাহ’র প্রথম সিনেমার নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান) সিনেমাটির উদ্যোগ নিয়েছিল। সেই সময় আমি আর সোহান সামিরার সঙ্গে কথা বলে সিনেমার গল্প সাজিয়েছিলাম। তাদের প্রেমকাহিনি অনেক সিনেম্যাটিক। সামিরার মুখে সেই গল্প শুনে আমাদের ভালো লেগেছিল। এ বছর সালমানের জন্মদিনের আগে আমার গল্পটির কথা মনে পড়ে। সালমান ও সোহানের স্মরণে সিনেমাটি তৈরির উদ্যোগ নিই। সামিরার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে সম্মতি দেয়। খবর পেয়ে কয়েকদিন আগে নীলা চৌধুরী লন্ডন থেকে ফোন করে আমাকে জানান, সালমানকে নিয়ে কোনো সিনেমা বানানো যাবে না। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া আছে তাদের। নীলা চৌধুরীর এ সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে সিনেমাটির কাজ স্থগিত করেছি।’
‘স্বপ্নের রাজকুমার’ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন নির্মাতা, আছে আক্ষেপও। ছটকু আহমেদ বলেন, ‘এটি সালমানের বায়োপিক নয়; দুই তরুণ-তরুণীর প্রেমকাহিনি। এই গল্পে নীলা চৌধুরীর তেমন ভূমিকা নেই। এরপরও কেন তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। গল্পটি সামিরার। তাই সামিরার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সামিরার সঙ্গে আমার ছবি দেখার পর সালমানের বেশ কয়েকজন ভক্ত গালাগাল করেছে। সব মিলিয়ে এখন আর সিনেমাটি নিয়ে ভাবতে চাইছি না।’
ছটকু আহমেদ আরও বলেন, ‘এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়াতে চাই না। এই গল্পটা আটকে থাকলে তাদের কী উপকার হবে, সেটা বুঝতে পারছি না। ২৮ বছর ধরে হত্যা-আত্মহত্যা নিয়ে যে চিৎকার করা হচ্ছে, তাতেইবা সালমানের কী লাভ হলো? এই সময়ের মধ্যে তো সালমানের নামে কোনো একটা ইনস্টিটিউট হয়নি, তাকে নিয়ে কোনো বই বের হয়নি। তাদের মুখে একটাই গল্প- হত্যা, নাকি আত্মহত্যা?’
আপাতত কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও ভবিষ্যতে সিনেমাটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে করতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন এই নির্মাতা।
মন্তব্য করুন