খলনায়ক থেকে নায়ক, জসিম সম্পর্কে অজানা ১০ তথ্য
ঢাকাই সিনেমার আশি দশকের দাপুটে চিত্রনায়ক জসিম। ভিলেন হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে অ্যাকশন হিরো হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশনধর্মী নায়ক জসিমের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর)। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর এই দিনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এই অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে তার চলচ্চিত্রাঙ্গনের সহকর্মীরা। এ উপলক্ষে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী বলেন, মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসিম ভাই সহ উক্ত মাসে যারা মৃত্যু বরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ আসর শিল্পী সমিতিতে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। একই দিনে বিকাল ৫টায় সমিতির সদস্যদের মাঝে সমিতির ডিজিটাল পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রিয় এই নায়ককে নিয়ে তার ভক্তদের কৌতূহলের শেষ নাই। তার এই চলে যাওয়ার দিনে তাকে নিয়ে দশটি অজানা বিষয় তুলে ধরা হল পাঠকদের জন্য।
১. জসিমের আসল নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন।
২. ১৯৭৩ সালে জসিম প্রয়াত জহিরুল হকের 'রংবাজ' (বাংলাদেশের প্রথম অ্যাকশন দৃশ্য যুক্ত করা ছবি) ছবিতে খলনায়ক হিসেবে অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন।
৩. সুভাস দত্তের 'সবুজ সাথী' চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।
৪. মুক্তিযোদ্ধা জসিম '৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
৫. দেওয়ান নজরুলের 'দোস্ত দুশমন' ছবির মাধ্যমে জসিম আলোড়ন তোলেন। 'দোস্ত দুশমন' ছবিটি হিন্দি সাড়াজাগানো ফিল্ম 'শোলে' ছবির রিমেক। ছবিটিতে তিনি গব্বারের চরিত্র করেছিলেন। খোদ শোলে ফিল্মের নামকরা চরিত্র গব্বার সিং এর আদলে থাকা ভারতীয় খলনায়ক আমজাদ খান পর্যন্ত ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন জসিমের।
৬. জসিমের মৃত্যুর পর এফডিসিতে তার নামে একটি ফ্লোরের নামকরণ করা হয়।
৭. তিনিই একমাত্র নায়ক, যিনি শাবানার সাথে একই সাথে প্রেমিক এবং ভাইরূপে চরিত্রদান করেছিলেন এবং দুটি চরিত্রই দর্শকরা খুব সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, যে শাবানা 'সারেন্ডার' ছবিতে জসিমের প্রিয়তমা হিসেবে সফল হয়েছেন, সেই শাবানা 'অবদান', 'মাস্তান রাজার' মতো ছবিতে জসিমের বড় বোন হয়ে সফল হয়েছিলেন।
৮. জসিমই আবিষ্কার করেছিলেন আজকের নায়ক রিয়াজকে। ১৯৯৪ সালে রিয়াজ চাচাতো বোন ববিতার সাথে বিএফডিসিতে ঘুরতে এসে নায়ক জসিমের নজরে পড়েন। জসিম তখন তাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। ১৯৯৫ সালে জসিমের সাথে 'বাংলার নায়ক' নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেন রিয়াজ।
৯. জসিমের তিন ছেলে। রাতুল, রাহুল, সামি। যার মধ্যে রাতুল ও সামি 'Owned' ব্যান্ডের বেজিস্ট ও ড্রামার (এই ব্যান্ডদল বর্তমানে অনেক ট্রেন্ডিং ব্যান্ড)। রাহুল 'Trainwreck' ব্যান্ডের গিটারিস্ট (এই ব্যান্ডের ড্রামারই পরে অর্থহীন ব্যান্ডে যোগ দিয়েছেন) আর সামি 'Porahor' এর ড্রামার।
১০. জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ড্রিমগার্লখ্যাত নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন।
নায়ক জসিমকে বেশিভাগ চলচ্চিত্রে শোষণ-বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা যেতো। ‘রংবাজ’, ‘এক মুঠো ভাত’ ‘কসাই’, ‘কাজের বেটি রহিমা’, ‘গরীবের ওস্তাদ’, ‘স্বামী কেন আসামী’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘গরিবের মাস্তান’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অবদান রাখেন এই অভিনেতা।
আরটিভি /এএ
মন্তব্য করুন