ফারুকী প্রসঙ্গে আশফাক নিপুন বললেন, ছোট মুখে বড় একটা কথা বলি তাহলে
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে বরাবরই নানান ইস্যুতে প্রতিবাদের সুরে কথা বলতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কখনও নিজের মতামত প্রকাশ করেন, কখনও আবার সমাজের মানুষের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন। ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই তাদেরকে সমর্থন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব ছিলেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়ে নিজের মন্ত্রণালয়ের কাজ শুরু করেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন উপদেষ্টাদের শপথবাক্য পড়ান। এরপর থেকে তাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বলা হয় তিনি আওয়ামী সরকারের ‘দোসর’।
ফারুকীর বিভিন্ন সময়ের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে করছেন সমালোচনা। শুধু তাই নয়, তার পদত্যাগও দাবি করেছেন কেউ কেউ। এরমধ্যে এমন গুঞ্জনও ওঠে, উপদেষ্টা পরিষদে থাকছেন না তিনি! তবে সেই গুঞ্জনে জল ঢালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
এদিন তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সোমবার (১৮ নভেম্বর) দেখা করবেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সংস্কৃতিতে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে প্রধান উপদেষ্টাকে নিজের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরবেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
এবার ফারুকীকে ‘আওয়ামী দোসর’ বলা নিয়ে কড়া জবাব দিয়েছেন নির্মাতা আশফাক নিপুন। নিপুন তার ফেসবুকে লেখেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে আওয়ামী দোসর বলা হাস্যকর। দুঃখজনক না বলে হাস্যকর বললাম কারণ খোদ কট্টর আওয়ামী শিল্পী সমাজ থেকে শুরু করে ক্যাডার বাহিনী পর্যন্ত তাকে নিজেদের দলে দেখতে আগেও স্বাচ্ছন্দবোধ করেননি, এখনো করবেন না। বিশ্বাস না হলে আপনার পাশের আওয়ামীজনকে জিজ্ঞেস করে দেখেন? ছ্যাঁত করে উঠবে!
তিনি আরও বলেন, উনার (ফারুকী) পুরোনো কিছু স্ট্যাটাস, ছবিই যদি প্রমাণ হয় তাহলে তার বিপরীতে গত ১৫ বছরে, বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে নিরন্তর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে সমালোচনা করে উনার ফেসবুক পোস্টও আমলে নেওয়া হোক। যেগুলো নিয়ে আওয়ামী শিল্পী সমাজ থেকে শুরু করে খোদ পলাতক প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত চূড়ান্ত বিরক্ত ছিলেন? অথবা আওয়ামী সরকারের আমলে দুইবার উনার সিনেমা আটকে দেওয়া আমলে নেওয়া হোক।
ফারুকীকে সংস্কৃতি উপদেষ্টা করায় যারা সমালোচনায় মেতে উঠেছেন তাদের উদ্দেশে নিপুন প্রশ্ন রেখে বলেন, ফারুকীর সংস্কৃতি উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে প্রচুর সমালোচনা। উনি সংস্কৃতির লোক তাই উনাকে এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বানানো। উনাকে তো অর্থ, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র, আইন বা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা করা হয় নাই। উনি দেশে বিদেশে সংস্কৃতি অঙ্গনের বিখ্যাত মানুষ, জুলাই আন্দোলনেরও বহুকাল আগে থেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সমালোচনায় সরব, স্পিরিটে তরুণ তাই হয়তো উনার এই নিয়োগ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই আন্দোলনের স্পিরিট, ডকুমেন্টস ধারণ করার মতো কাজ উনি যদি করে দেখাতে না পারেন তাহলে আমিও উনার সমালোচনা করব। ১০০ বার করব। কিন্তু কাজটা তো করে দেখানোর সুযোগ দিতে হবে আগে? সেটাও দেওয়া যাবে না কেন? শত শত ফ্যাসিস্ট সমালোচনার বাইরে উনার কয়েকটা ফেসবুক পোস্ট বা পলক সাহেবের সাথে একটা ছবির কারণে?
ছোট মুখে বড় একটা কথা বলি তাহলে, বেয়াদবি মাফ করবেন। এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সম্পৃক্ত অনেককেই আমরা চিনি, জানি যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুইভাবেই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত ছিল। কেউ ইচ্ছাকৃত, কেউ অনিচ্ছাকৃত, কেউ কৌশলে আর কেউ বাধ্য হয়ে ছিল। কিন্তু আন্দোলনের স্পিরিটে ফ্যাসিস্ট তাড়াতে সবাই এক হয়ে গিয়েছিল। এই ঐক্যই ছিল আমাদের শক্তি। এখন এই ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি কেন? কার বা কাদের সুবিধার জন্য?-প্রশ্ন রাখেন নিপুন।
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ফারুকীকে নিয়ে সমালোচনা কইরেন’-এমন মন্তব্য করে নিপু তার লেখার শেষে বলেন, ফারুকীর কাজের সমালোচনা ১০০ বার করেন। সেটা উনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব উনি পালন করতে না পারলে করেন। যৌক্তিকভাবে করেন। কিন্তু উনি যা না, যা উনি বলেন নাই, সেটার পিছনে অযৌক্তিক সমালোচনা করে শক্তি নষ্ট কইরেন না। আমি বিশ্বাস করি, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এই মহান আন্দোলনকে ডকুমেন্টেড করার জন্য উনার সেবাবলে সর্ব্বোচ্চটাই ঢেলে দেবেন। সেই সক্ষমতা উনার এবং উনার টিমের আছে। আমি সাগ্রহে তাকিয়ে আছি উনি আমাদের কি কি উপহার দিতে পারেন সেদিকে। না পারলে তখন উনাকে গালমন্দ কইরেন।
মন্তব্য করুন