ঢাকাসোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

সংস্কৃতি খাতে অপ্রতুল বাজেটে ক্ষোভ

পাভেল রহমান, আরটিভি অনলাইন

শুক্রবার, ০৮ জুন ২০১৮ , ০৫:২২ পিএম


loading/img
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তাতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৫০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মূল বাজেটের ০.১০৯ ভাগ।

বিজ্ঞাপন

২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রথমে ৪১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও পরে তা সংশোধন করে ৩৯৬ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১১৩ কোটি বরাদ্দ বাড়লেও মূল বাজেটের তুলনায় এর আকার ‘যথেষ্ট ছোট’ বলে মনে করছেন সংস্কৃতিজনরা। আরটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন তাদের বাজেট প্রতিক্রিয়া।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘সংস্কৃতি খাতকে বরাবরের মতো এবারও অবহেলার চোখে দেখা হয়েছে। আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি, মূল বাজেটের অন্তত ১ ভাগ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেয়া হোক। এখনও যেহেতু সুযোগ আছে, আমি আশা করবো বর্তমান সংস্কৃতিবান্ধব সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তার বিপরীতে আমরা সাংস্কৃতিক জাগরণের কথা বলছি। সুস্থ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক জাগরণের জন্য সংস্কৃতিখাতে সরকারের বাজেট বাড়াতে হবে।’

নৃত্যশিল্পী ও গবেষক লুবনা মারিয়াম বলেন, ‘সারা বিশ্বে যখন সংস্কৃতির গুরুত্ব বাড়ছে তখন আমাদের দেশে যেন গুরুত্ব কমছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে নিজস্ব সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় সরকার যেভাবে এগিয়ে আসে, আমাদের এখানে সেটা তেমন হচ্ছে না। সরকারকে সংস্কৃতির গুরুত্বটা বুঝতে হবে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘সংস্কৃতি খাতে বাজেট খুবই অপ্রতুল, সন্তোষজনক নয়। আমরা অনেকদিন ধরেই দাবি করছি, মূল বাজেটের ১ শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেয়া হোক। দেশজুড়ে সংস্কৃতিচর্চার ভিতকে মজবুত করার জন্য বাজেট বাড়ানোর দাবি জানাই। উপজেলা ও গ্রামে গ্রামে যেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সংস্কৃতি চর্চা অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

নাট্যজন ড. মোহাম্মদ বারী বলেন, ‘দেশজুড়ে যে সামাজিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে, মাদক নিয়ন্ত্রণে যেভাবে বুলেট খরচ করা হচ্ছে, তার বিপরীতে সাংস্কৃতিক জাগরণ তৈরি করতে পারলে, তবেই মাদক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। সমাজকে সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় গতিশীল করতে হলে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার কোনও বিকল্প নেই। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশের জন্য সংস্কৃতি খাতে বিনিয়োগও বাড়াতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সহ-সাধারণ সম্পাদক চন্দন রেজা বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার বাজেট কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু মূল বাজেট যে পরিমাণ বেড়েছে, সেই পরিমাণ বাড়ানো হয়নি। সংস্কৃতি খাতকে অবহেলা করে, সামাজিক ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবো না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে, সংস্কৃতি খাতে যেন বাজেট বাড়ানো হয়। মূল বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়।’

নাট্যকার ও নির্দেশক শুভাশিস সিনহা বলেন, ‘সাংস্কৃতিক জাগরণ ছাড়া মানিবক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে সংস্কৃতিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। কিন্তু সরকার সংস্কৃতি খাতে যে বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছে, সেটা খুবই অপ্রতুল। সংস্কৃতি খাতে সরকারের কাছে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানাই।’ 

নাট্যনির্দেশক বাকার বকুল বলেন, ‘সরকারের কাছে সংস্কৃতি খাত কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তারই প্রকাশ এই বাজেট। এত অপ্রতুল আর পরিকল্পনাহীন বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সারাদেশে সংস্কৃতিচর্চাকে বেগবান করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে সংস্কৃতিকর্মীরা তো ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান’। কিন্তু এখন বাস্তবতা ভিন্ন। সবকিছু যখন অর্থমূল্যের উপর নির্ভরশীল তখন সরকারকেই সংস্কৃতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হতে হবে। সংস্কৃতি খাতে বাজেট বাড়ানোর দাবি জানাই।’

পিআর/পি

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |