জগতে কিছু মানুষ থাকেন যাদের কোনো মৃত্যু হয় না। বেঁচে থাকেন তাদের কর্ম দিয়ে। চিরকাল অমর হয়েই থাকেন মানুষের মনের মণিকোঠায়। তেমনই একজন অভিনেতা ছিলেন নায়ক মান্না। তিনি ছিলেন খেটেখাওয়া মানুষের নায়ক। অভিনয়ের মধ্য দিয়ে কথা বলতেন সাধারণ জনগণের।
নায়ক মান্নার চলে যাওয়ার পরেও তার জনপ্রিয়তায় বিন্দু পরিমাণ ভাটা পরেনি। তার জন্মদিন কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীতে ভক্ত-অনুরাগীরা তাকে স্মরণ করেছেন নানা আয়োজনে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে তার পুরোনো একটি সাক্ষাৎকার, যেখানে উঠে এসেছে গ্রামের শেকড়, ছোটবেলার স্মৃতি এবং মাছচাষের গল্প।
সেখানে মান্না বলেছিলেন, গ্রামের ছেলে ঢাকায় এসে হিরো হয়ে গেছি, নায়ক হয়ে গেছি। আমার ভাগ্য ভালো। কিন্তু আমার অতীত জীবন গ্রামে কাটিয়েছি।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর কৈতলা গ্রামে জন্ম নেওয়া এই অভিনেতা জানান, গ্রামের পুকুর, নদী, খাল-বিল—এসবের সঙ্গে ছিল তার গভীর সংযোগ। ছোটবেলায় তিনি মাছ ধরতেন, সাঁতার কাটতেন। এখনো গ্রামে মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত তার পরিবার। নিজে সরাসরি না করলেও মা, বড় ভাই ও গ্রামের কৃষাণরা এই কাজ করেন। ঢাকা থেকে তিনি মাছের পোনা পাঠিয়ে দেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল জন্ম নেওয়া মান্নার আসল নাম ছিল সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার। মাধ্যমিক শেষ করে তিনি ঢাকায় আসেন এবং ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। একদিন বলাকা সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে গিয়ে হাতে পান একটি লিফলেট—যেখানে লেখা ছিল, ‘এফডিসিতে নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছে’। সেই উৎসাহেই অডিশনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন মান্না। বদলে নেন নিজের নামও।
১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাসেম মালার প্রেম’ সিনেমা দিয়ে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা পান। এরপর ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’, ‘আম্মাজান’, ‘বীর সৈনিক’, ‘লাল বাদশা’, ‘কষ্ট’সহ প্রায় সাড়ে ৩০০ সিনেমায় অভিনয় করেন। নিজে প্রযোজনাও করেছেন একাধিক হিট সিনেমা।
২০০৩ সালে ‘বীর সৈনিক’ ছবির জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার জিতেছেন একাধিকবার।
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ঢালিউডের এই মহাতারকা। মান্নার পরিবারের দাবি, ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে মামলা এখনো চলমান।
আরটিভি/এএ