৩৬তম বিসিএস ভাইভায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডারদের নিয়োগের ব্যাপারে সম্প্রতি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৬ (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভবনের ১১তলা) এ গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল সাব-রেজিস্ট্রার পদের রিকুইজিশন পিএসসিতে প্রেরণের বিষয়ে সম্মিলিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে তথ্য জানা।
তৃতীয় দিনের মতো গিয়েছিলাম ১৭ জানুয়ারি। এর আগের দুইদিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা অফিসে ছিলেন না। তৃতীয়দিন সকাল ১০টা ২০মিনিটে অফিসে গিয়ে তাকে পেয়ে গেলাম। সালাম দিয়ে বললাম, আমি ৩৬তম নন-ক্যাডারদের পক্ষ থেকে একটা তথ্য নিতে এসেছি। সাব-রেজিস্ট্রার পদের রিকুইজিশন পিএসসিতে গেছে কিনা?
এ কথা শোনার পর তিনি আমার উপর চড়াও হয়ে অফিস থেকে চলে যেতে বললেন। আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, আমি আপনার সাথে এক মিনিট কথা বলতে চাই, তাহলে আপনি বিষয়টি বুঝতে পারবেন কেনো এসেছি। একথা শুনে ওই রুমের ভিতরে কাচের দেয়ালঘেরা কক্ষ থেকে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (বিচার শাখা-৬) বের হয়ে অতর্কিত আমাকে বলে বসলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের রিকুইজিশন কেনো পাঠাতে হবে? পিএসসি চাইলেই কি রিকুইজিশন দিতে হবে? সাব-রেজিস্ট্রার হওয়ার এতো শখ কেনো? নন-ক্যাডার থেকে প্রতিবছর নিয়োগ দেয়া লাগবে কেনো?
আমি তাদের আচরণে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, মন্ত্রণালয়গুলোতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে শূন্যপদ দ্রুত পূরণ করতে। তাই আপনাদের কাছে রিকুইজিশনের তথ্য জানতে এসেছিলাম। আমি ২৭০০ প্রার্থীর পক্ষে শুধু তথ্য নিতে এসেছি রিকুইজিশন পাঠানোর বিষয়ে। তথ্য না দিলে চলে যাব। কথা না বাড়িয়ে ভাল করে বলতে পারতেন তথ্য দেয়া যাবে না।
তারপর সেই কর্মকর্তা আরো ভয়ানক চড়াও হয়ে বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী বললেই কি রিকুইজিশন দিতে হবে? যান আপনার প্রধানমন্ত্রীকে গিয়ে বলেন রিকুইজিশন দিতে। আমাদের কাছে কেনো আসছেন।’
যুক্তি দিয়ে কথা বলায় আমাকে প্রায় মারতে আসেন এমন অবস্থা। আমি মনে অনেক কষ্ট নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে এলাম। প্রজাতন্ত্রের টাকায় বেতন নিয়ে যাদের জীবিকা চলে, সামান্য ভাল আচরণ কি তারা নাগরিকদের সাথে করতে পারে না? হ্যাঁ, তথ্য না দিলেও কষ্ট পেতাম না, কিন্তু কোন রেষ ছাড়াই এ কেমন আচরণ তাদের?
এসব কর্মকর্তার রূঢ় আচরণের মাধ্যমেই বোঝা যায়, দেশে বেকারত্ব সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কিছু অদৃশ্য অপশক্তির শূন্যপদের চাহিদা প্রেরণের অনিচ্ছায়। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মানেন না, তারা জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে নিজেরা আরাম-আয়েশ করে দিন কাটান। অপরদিকে বেকাররা পড়াশুনা করে দীর্ঘ প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে তাদের সদিচ্ছার অভাবে পদ ফাঁকা থাকলেও সেখানে নিয়োগ পায় না। নতুন কেউ চাকরি পেয়ে তাদের সাথে কাজ করবে এটা তাদের অনেকেরই সহ্য হয় না।
শূন্যপদের চাহিদা প্রেরণে অনীহা, যুগ যুগ ধরে নিয়োগ বিধির দোহাই দিয়ে পদ শূন্য রাখা এসবই এখন দপ্তরগুলোর বাস্তবচিত্র। দপ্তরগুলোর নবনিয়োগের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাজটা কি?
জনপ্রশাসনমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, মন্ত্রণালয়গুলোতে ৩ লাখের বেশি পদ শূন্য, সেগুলোতে দ্রুত শূন্যপদ পূরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। অতীতেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শূন্যপদ পূরণের নির্দেশ দিয়েছেন, তা নিয়ে সব পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পরেও তাদের রিকুইজিশন পাঠাতে এতো কিসের অনীহা? পদ ফাঁকা রেখে তাদের লাভ কোথায়? নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগদান করলে তাদের সমস্যা কি? নিয়োগ ও বেতন দেবে সরকার। তবুও কেনো তারা চান না নতুন নিয়োগ হোক। এ বিষয়গুলো মনে হয় জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা দরকার।
লাখ লাখ শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ৩৬তম বিসিএস ভাইভায় উত্তীর্ণ ২৭০০ নন-ক্যাডারদের সুপারিশ করার জন্য দ্বিতীয়বারের মত রিকুইজিশন চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন সব মন্ত্রণালয়ে। কারণ তিনি প্রথম চিঠি দেয়ার পর মন্ত্রণালয়গুলোর সাড়া তেমন পাননি। যে অল্পসংখ্যক পদের চাহিদা পৌঁছেছে, কোটা শিথিল না করলে তা কোটার প্রার্থীর অভাবে সংরক্ষিত থাকবে। কি আছে বেকার ও বিসিএস উত্তীর্ণ এই মেধাবী তরুণদের কপালে? প্রতিটি জায়গায় প্রতিবন্ধকতা যেনো তাদের নিত্যসঙ্গী। দপ্তরগুলোর সামান্য সদিচ্ছায় হাসি ফুটতে পারে ২৭০০ নন ক্যাডার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মুখে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন, তখন প্রজাতন্ত্রের কিছু নিচুমনের কর্মকর্তা নাগরিকদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয় তাও ভুলে গেছেন।
রাষ্ট্রের নাগরিকদের সেবা করতে না চাইলে চাকরি ছেড়ে দিন, জনগণের খাজনার টাকায় বেতন তুলে তাদেরকে ভোগান্তি দিতে আপনাদের একটুও কি বিবেকে বাধে না?
তবে এর উল্টোচিত্রও আছে। অফিসের বেশিরভাগ কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছেন, সাহস যুগিয়েছেন রিকুইজিশন পাঠানোর তথ্য জানার ক্ষেত্রে। তাদের আচরণে মুগ্ধ হয়েছি। তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। নন-ক্যাডারদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
সব ছোটবড় সমস্যার সমাধান প্রধানমন্ত্রীকেই সরাসরি দিতে হয় এখন। শূন্যপদ পূরণের মাধ্যমে বেকারদের চাকরি দেয়ার জন্য এখন সব মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ জরুরি প্রয়োজন। সংসদ ও মন্ত্রিপরিষদের সভায় বললেও প্রজাতন্ত্রের গুটি কয়েক স্বার্থবাজ কর্মকর্তারা তাদের নির্দেশ মানেন না। এই অবস্থার আশু সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
মেধাবী তরুণ বেকারদের কথা তারা বিন্দুমাত্র ভাবেন না। কিছু কর্মকর্তার খামখেয়ালিতে ভেস্তে যেতে বসেছে লাখো যোগ্য চাকরিপ্রার্থীর স্বপ্ন। কবে তাদের জ্ঞান ফিরবে?
দেশের জনগণের ভরসার একমাত্র আশ্রয়স্থল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশের অপেক্ষায় এখন লাখ লাখ বেকার মেধাবী তরুণরা। চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও কড়া নির্দেশনা এখন সকল বেকারদের প্রাণের দাবি।
লেখক: ৩৬তম বিসিএস ভাইভায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার পদপ্রার্থী