আসসালামু আলাইকুম,
প্রথমে মহান রব্বুল আলামিনের প্রতি শুকরিয়া কামনা করছি। যিনি আমাকে আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় সহযোদ্ধাদের কাছে, আমার পরিবার পরিজনের কাছে, সাংবাদিক ভাই বোনদের কাছে, শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসার তৌফিক দান করছেন।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
২৬ মার্চ, ২০২১
স্বাধীনতার ৫০ বছরে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যাদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে স্মৃতিসৌধে যাওয়ার পথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটের সামনে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী RAB ও সাদা পোশাক এর লোকের দ্বারা গুমের শিকার হই। প্রথমে কালো গাড়িতে তুলে নিয়ে তারা গাড়ির ভেতরেই টর্চার করে। তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে হাতে হাত কড়া পরায়, গামছা দিয়ে চোখ বাঁধে, কালো যম টুপি দিয়ে ফাঁসির আসামির মতো মুখ ঢেকে দেয়। তারপর তাদের গাড়িতে তোলে। আমাকে মাঝে বসায়। আমার দুই পাশে দুই জন, পেছনে দুইজন আর সামনে দুই জন বসা থাকে।
চোখে কিছু দেখা যায় না। আমার দুই পাশে যে দুজন বসা তাদের অস্ত্রের শব্দ শোনা যায়। পেছনে আর সামনে আরও যে চার জন বসা তাদের কথার দ্বারা বোঝা যায়। তারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাও বলে না। তারা তাদের নামটা পর্যন্তও ডাকে না। মামা বলে সম্বোধন করে। কোথায় আছে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জায়গায় নামটা পর্যন্তও বলে না। এই রকম অবস্থায় গাড়ির মধ্যে চার ঘণ্টার মতো ছিলাম। তারপর তারা গাড়ি থেকে নামালো, গামছা দিয়ে চোখ বাঁধা, কালো ফাঁসির যম টুপি পরা থাকার কারণে বাইরে কোনো কিছু দেখার উপায় নেই। আমাকে দুজন ধরে নিয়ে যাচ্ছে এটা বোঝা যাচ্ছে। যখন সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন বুঝতে পারলাম কোনো একটা বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একটা রুমে নিয়ে রাখে।
সন্ধ্যার দিকে খেতে দেয়। খাওয়া শেষ হইলে আগের মতো গামছা দিয়ে চোখ বাঁধে, কালো যম টুপি পরায়। তারপর তারা বললো তাদের বড় স্যার আসবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তাদের বড় স্যার জিজ্ঞাসাবাদের প্রথমে বলতে লাগলো—ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, ভালো একটা চাকরিতে যেতে পারতাম তা বাদ দিয়ে কেন রাজনীতিতে আসলাম। শেষের দিকে কথাবার্তায় এমন একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করলো যেকোনো সময় আমার লাইফ শেষ হয়ে যেতে পারে। টর্চার করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবারও গাড়িতে তুললো। বাইরে কিছুই দেখা যায় না। অনেক রাত পর্যন্ত গাড়িতে তারা আমাকে নিয়ে ঘুরালো। গাড়ির ভেতরে তারা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে মনে হয় যেকোনো সময় তারা ক্রস ফায়ার দিয়ে দেবে। লাইফের শেষ ইচ্ছে কী এইগুলো জিগাইতে থাকে। অনেক রাত ঘোরানোর পর তারা আমাকে একটা রুমে রাখে। যে রুমটাকে তারা টর্চার সেল বলে। রুমে ঘুমানোও যায় না। দেয়ালের সাথে হাতকড়া তারা আটকে দেয়। এভাবেই ২৬ মার্চ রাত যায়। ২৭ মার্চ তারা আমাকে গামছা দিয়ে চোখ বাঁধা, কালো ফাঁসির যম টুপি পড়া অবস্থায় রুমে কয়েকজন নির্যাতন শুরু করে। মনে হচ্ছে যেকোনো সময় মৃত্যু হয়ে যাবে আমার। শরীরের অবস্থা খারাপ দেখে ২৮ মার্চ ভোর রাতে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে তারা চিকিৎসা করায় আমাকে। চিকিৎসা শেষে আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে মতিঝিল থানায় দেন। মতিঝিল থানা থেকে কোর্টে তুললে কোর্ট দুই দিনের রিমান্ড দেয়। রিমান্ড শেষে মতিঝিল থেকে আবার কোর্টে তোলা হয়। কোর্ট কেরানিগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
দীর্ঘ পাঁচ মাসের বেশি সময় সময় কারাবাসের পর জামিনে মুক্ত হই। কারাবাসের লাইফ নিয়ে এক সময় লিখবো।
আমি ধন্যবাদ জানাই আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় সহযোদ্ধাদের প্রতি, যারা সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আমাদের সন্ধানের, আমাদের মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন।
আমি ধন্যবাদ জানাই সাংবাদিক ভাই বোনদের প্রতি, যারা সকল বাধা উপেক্ষা করে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন।
আমার সহযোদ্ধারা যদি আমাদের সন্ধানের জন্য রাজপথে আন্দোলন করতে না পারতো, সাংবাদিক ভাই বোনেরা যদি সঠিক তথ্য তুলে না ধরতে পারতো, তাহলে আমাদেরকেও অতীতে অসংখ্য মানুষের মতো ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা করতে পারতো।
আমি ধন্যবাদ জানাই আমার আইনজীবী ভাই-বোনদের প্রতি, যারা দীর্ঘ পাঁচ মাসের বেশি সময় সত্যের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আমাদের মুক্ত করেছেন।
আইনের শাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার পরিবর্তে বাংলাদেশকে অপরাধের সম্রাজ্যে পরিণত করেছে। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করার মাধ্যমে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সাথে বেঈমানি করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করেছে।
যারা ভেবেছিল আমাকে গুম করে, নির্যাতন করে, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও বিদেশি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধের লড়াই থেকে দূরে রাখবে তারা ভুল ভেবেছে।
বছরে ২টা ঈদ। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করতে গিয়ে ২টা ঈদই কারাগারে করতে হয়েছে। এই রকম অসংখ্য ঈদও যদি কারাগারে করতে হয় তবুও মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে বিন্দুমাত্র পিছবা হবো না।
পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত জুলুম নির্যাতনের পর শান্তি ও সুখের ইতিহাস। যখন যারা নির্যাতন সহ্য করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে তারাই ইতিহাসে বিজয়ী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমি আমার অগণিত আগামীর বীর যোদ্ধাকে দেখতে পাচ্ছি, যারা আগামীর বাংলাদেশে গণমানুষের অধিকার আদায়ের পক্ষে, বিদেশি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
আসসালামু আলাইকুম,
প্রথমে মহান রব্বুল আলামিনের প্রতি শুকরিয়া কামনা করছি। যিনি আমাকে আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় সহযোদ্ধাদের কাছে, আমার পরিবার পরিজনের কাছে, সাংবাদিক ভাই বোনদের কাছে, শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসার তৌফিক দান করছেন।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
২৬ মার্চ, ২০২১
স্বাধীনতার ৫০ বছরে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যাদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে স্মৃতিসৌধে যাওয়ার পথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটের সামনে থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী RAB ও সাদা পোশাক এর লোকের দ্বারা গুমের শিকার হই। প্রথমে কালো গাড়িতে তুলে নিয়ে তারা গাড়ির ভিতরেই টর্চার করে। তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে হাতে হাত কড়া পরায়, গামছা দিয়ে চোখ বাঁধে, কালো যম টুপি দিয়ে ফাঁসির আসামির মতো মুখ ঢেকে দেয়। তারপর তাদের গাড়িতে তোলে। আমাকে মাঝে বসায়। আমার দুই পাশে দুই জন, পেছনে দুইজন আর সামনে দুই জন বসা থাকে।
চোখে কিছু দেখা যায় না। আমার দুই পাশে যে দুজন বসা তাদের অস্ত্রের শব্দ শোনা যায়। পেছনে আর সামনে আরও যে চার জন বসা তাদের কথার দ্বারা বোঝা যায়। তারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাও বলে না। তারা তাদের নামটা পর্যন্তও ডাকে না। মামা বলে সম্বোধন করে। কোথায় আছে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জায়গায় নামটা পর্যন্তও বলে না। এই রকম অবস্থায় গাড়ির মধ্যে চার ঘণ্টার মতো ছিলাম। তারপর তারা গাড়ি থেকে নামালো, গামছা দিয়ে চোখ বাঁধা, কালো ফাঁসির যম টুপি পরা থাকার কারণে বাইরে কোনো কিছু দেখার উপায় নেই। আমাকে দুজন ধরে নিয়ে যাচ্ছে এটা বোঝা যাচ্ছে। যখন সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন বুঝতে পারলাম কোনো একটা বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একটা রুমে নিয়ে রাখে।
সন্ধ্যার দিকে খেতে দেয়। খাওয়া শেষ হইলে আগের মতো গামছা দিয়ে চোখ বাঁধে, কালো যম টুপি পরায়। তারপর তারা বললো তাদের বড় স্যার আসবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তাদের বড় স্যার জিজ্ঞাসাবাদের প্রথমে বলতে লাগলো ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, ভালো একটা চাকরিতে যেতে পারতাম তা বাদ দিয়ে কেন রাজনীতিতে আসলাম। শেষের দিকে কথাবার্তায় এমন একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করলো যেকোনো সময় আমার লাইফ শেষ হয়ে যেতে পারে। টর্চার করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবারও গাড়িতে তুললো। বাইরে কিছুই দেখা যায় না। অনেক রাত পর্যন্ত গাড়িতে তারা আমাকে নিয়ে ঘুরালো। গাড়ির ভেতরে তারা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে মনে হয় যেকোনো সময় তারা ক্রস ফায়ার দিয়ে দেবে। লাইফের শেষ ইচ্ছে কী এইগুলো জিগাইতে থাকে। অনেক রাত ঘোরানোর পর তারা আমাকে একটা রুমে রাখে। যে রুমটাকে তারা টর্চার সেল বলে। রুমে ঘুমানোও যায় না। দেয়ালের সাথে হাতকড়া তারা আটকে দেয়। এভাবেই ২৬ মার্চ রাত যায়। ২৭ মার্চ তারা আমাকে গামছা দিয়ে চোখ বাঁধা, কালো ফাঁসির যম টুপি পড়া অবস্থায় রুমে কয়েকজন নির্যাতন শুরু করে। মনে হচ্ছে যেকোনো সময় মৃত্যু হয়ে যাবে আমার। শরীরের অবস্থা খারাপ দেখে ২৮ মার্চ ভোর রাতে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে তারা চিকিৎসা করায় আমাকে। চিকিৎসা শেষে আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে মতিঝিল থানায় দেন। মতিঝিল থানা থেকে কোর্টে তুললে কোর্ট দুই দিনের রিমান্ড দেয়। রিমান্ড শেষে মতিঝিল থেকে আবার কোর্টে তোলা হয়। কোর্ট কেরানিগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
দীর্ঘ পাঁচ মাসের বেশি সময় সময় কারাবাসের পর জামিনে মুক্ত হই। কারাবাসের লাইফ নিয়ে এক সময় লিখবো।
আমি ধন্যবাদ জানাই আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় সহযোদ্ধাদের প্রতি, যারা সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আমাদের সন্ধানের, আমাদের মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন।
আমি ধন্যবাদ জানাই সাংবাদিক ভাই বোনদের প্রতি, যারা সকল বাধা উপেক্ষা করে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন।
আমার সহযোদ্ধারা যদি আমাদের সন্ধানের জন্য রাজপথে আন্দোলন করতে না পারতো, সাংবাদিক ভাই বোনেরা যদি সঠিক তথ্য তুলে না ধরতে পারতো, তাহলে আমাদেরকেও অতীতে অসংখ্য মানুষের মতো ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা করতে পারতো।
আমি ধন্যবাদ জানাই আমার আইনজীবী ভাই-বোনদের প্রতি, যারা দীর্ঘ পাঁচ মাসের বেশি সময় সত্যের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আমাদের মুক্ত করেছেন।
আইনের শাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার পরিবর্তে বাংলাদেশকে অপরাধের সম্রাজ্যে পরিণত করেছে। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করার মাধ্যমে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সাথে বেঈমানি করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করেছে।
যারা ভেবেছিল আমাকে গুম করে, নির্যাতন করে, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও বিদেশি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধের লড়াই থেকে দূরে রাখবে তারা ভুল ভেবেছে।
বছরে ২টা ঈদ। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করতে গিয়ে ২টা ঈদই কারাগারে করতে হয়েছে। এই রকম অসংখ্য ঈদও যদি কারাগারে করতে হয় তবুও মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে বিন্দুমাত্র পিছবা হবো না।
পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত জুলুম নির্যাতনের পর শান্তি ও সুখের ইতিহাস। যখন যারা নির্যাতন সহ্য করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে তারাই ইতিহাসে বিজয়ী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমি আমার অগণিত আগামীর বীর যোদ্ধাকে দেখতে পাচ্ছি, যারা আগামীর বাংলাদেশে গণমানুষের অধিকার আদায়ের পক্ষে, বিদেশি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
লেখক: শাকিল উজ্জামান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও দপ্তর সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি।