খানিকটা দেরিতে হলেও মফস্বল শহরের একটি বার্ষিক উৎসব থেকে দেশের প্রবীণ আইনজীবী, মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রধান কৌঁসুলী এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুকে গুণীজন সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। গেলো ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে এ সম্মাননা দেয়া হয়।
গোলাম আরিফ টিপু একাধারে বিজ্ঞ আইনজীবী, উত্তরবঙ্গে প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কারিগর ও রূপকার, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন অগ্রসৈনিক। জন্মেছেন ১৯৩১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামে। পড়েছেন রাজশাহী কলেজে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে হাল ধরেন ছাত্র ইউনিয়নের। ১৯৫৪ সালে সংগঠনটির দ্বিতীয় সম্মলনেই হন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন। রাজশাহীর ভাষা আন্দোলনে তাঁর ছিল অনবদ্য ভূমিকা। হয়েছিলেন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রাজশাহী কলেজে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ শহীদ মিনার নির্মাণে গোলাম আরিফ টিপু মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ৮৬ বছরের দুর্দান্ত তরুণ এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু এখানো নিবেদিত আছেন যুদ্ধাপরাধী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচারের জন্য গঠিত আইসিটির রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী হিসেবে। তাঁর প্রজ্ঞাময় দীর্ঘ কর্মযজ্ঞকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে প্রয়োগ করে চলেছেন তিনি। তীক্ষ্ণভাবে মামলার সব দিকগুলো বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে মহামান্য আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেছেন। আন্তর্জাতিক এ আদালতে তাঁর বিচক্ষণতা ও নিরলস শ্রমসাধনায় এরই মধ্যে 'হেভিওয়েট' যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর হয়েছে।
গোলাম আরিফ টিপু প্রচারবিমুখ মানুষ। নিভৃতে কাজ করে চলেন। নিজেকে প্রকাশে খুব অনীহা তাঁর। তবে মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও প্রগতিশীল আন্দোলনে স্থির থাকবার মানুষ নন তিনি। ঝাঁপিয়ে পড়েন এখনো। স্বীকৃতির ধার ধারেন না। তবুও বলি, দেশের এমন গুণী ও গুরুজনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দরকার আছে।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। একুশে পদক দেয়া হয় এ মাসেই। এবার সে পদকের নামের তালিকাও ঘোষিত হয়েছে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও একুশে পদক নির্বাচন কমিটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে স্বচ্ছভাবে পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেছেন। অভিনন্দন তাঁদের। তবে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ, এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু'র মতো গুণী, প্রচারবিমুখ, আপাদমস্তক সংগ্রামী মানুষের যথাযথ মূল্যায়নেও সরকার নিশ্চয় দূরদর্শিতা ও স্বচ্ছতার প্রতিফলন ঘটাবে।