ঢাকাশুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে করণীয়

মোহাঃ নূর-উল-আমিন, মোসা: রোজলীন আফসানা বিশ্বাস

বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০৪:৪৪ পিএম


loading/img
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশও এই বাস্তবতা থেকে মুক্ত নয়। সাধারণ শিক্ষার মূলধারার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অসুবিধার কারণে, নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যে, এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন, স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি, ব্যবহারিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের জন্য বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ ও ন্যায়সংগত সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

তবে বাংলাদেশে নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে সরকারি পর্যায়ে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক।

বিজ্ঞাপন

নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের করণীয়

শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত চাহিদা ও সক্ষমতা বিবেচনা
নিউরো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আগ্রহ, সক্ষমতা ও চাহিদা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। তাদের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি, তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

পার্সোনালাইজড কাজের পরিকল্পনা
প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য পৃথক কাজের পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার, যাতে তাদের স্বতন্ত্র সক্ষমতার সঙ্গে মানানসই কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা যায়। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও সামাজিক দক্ষতার মূল্যায়ন করা এবং তাদের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ফিডব্যাক ব্যবস্থা চালু করা আবশ্যক।

বিজ্ঞাপন

প্রোডাকশন প্রক্রিয়ার নমনীয়তা
ফ্লেক্সিবল কাজের সময় নির্ধারণ করা এবং পর্যায়ক্রমে কাজের পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা জরুরি। একটি মডুলার প্রোডাকশন সিস্টেম তৈরি করা উচিত, যা তাদের ধাপে ধাপে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেবে।

শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ, প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম
নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সহায়ক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ব্রেইল মেশিন, হিয়ারিং এড, স্পিচ-টু-টেক্সট সফটওয়্যার, এবং ভিজ্যুয়াল লার্নিং টুল।

শিক্ষণ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্তিকরণ
শিক্ষা কার্যক্রমে এভিডেন্স-বেসড কৌশল, ব্যক্তিগত শিক্ষণ পরিকল্পনা, ভিডিও টিউটোরিয়াল, চিত্র ও ভিজ্যুয়াল শিডিউল ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। হাতেকলমে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ইন্টারঅ্যাকটিভ লার্নিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা উচিত।

কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন
নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী কারিকুলাম ও পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করতে হবে। ট্রেড ভিত্তিক শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা, লেসন প্ল্যান ও প্রশিক্ষণের কাঠামো নির্ধারণ করা দরকার।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও রিসোর্স উন্নয়ন
প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গঠন এবং দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ করা আবশ্যক। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক ও সহায়ক কর্মী নিয়োগ করা উচিত।

কাজের মূল্যায়ন ও ফিডব্যাক
শিক্ষার্থীদের কাজের দক্ষতা ও অগ্রগতির ওপর নিয়মিত মূল্যায়ন করা দরকার। শিক্ষকদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের কাছ থেকেও ফিডব্যাক সংগ্রহ করে শিক্ষণ কার্যক্রম উন্নয়ন করা উচিত।

মেন্টরিং ও সাপোর্ট সিস্টেম
শিক্ষার্থীদের জন্য মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে, যেখানে অভিজ্ঞ কর্মীরা তাদের গাইডলাইন ও সহায়তা প্রদান করবেন। নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, এবং বিহেভিয়ার থেরাপির ব্যবস্থা করা দরকার।

ইন্টার্নশিপ ও কর্মসংস্থান
সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ইন্টার্নশিপ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ, মেন্টরশিপ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

আইনী ও নীতিগত সহায়তা
নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

অর্থনৈতিক সহায়তা
নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বৃত্তি, সরকারি অনুদান ও বেসরকারি সংস্থার সহায়তা সংগ্রহ করা জরুরি, যাতে তারা অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।

ইন্টার্নশিপ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরির সুযোগ বাড়ানো।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থান সংক্রান্ত বিশেষ প্রণোদনা প্রদান।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ কর্মসংস্থান কেন্দ্র চালু করা।

নিউরো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষা চালু করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান, আর্থিক সহায়তা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ তৈরি করা গেলে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারবে।

আরটিভি/জেএম

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |