ঢাকাবুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

মাইকোপ্লাজমা ব্যাকটেরিয়া থেকে হতে পারে নিউমোনিয়া

ডয়চে ভেলে

শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ , ০৩:৫৯ পিএম


loading/img
ফাইল ছবি।

মাইকোপ্লাজমা হলো একধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে৷ সাধারণত এই সংক্রমণ নিয়ে ভাবনার কিছু না থাকলেও কখনো কখনো এটি গুরুতরও হতে পারে। বিশেষ করে বেশি বয়সি মানুষদের এ বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি৷মাইকোপ্লাজমা সংক্রমণ একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা কাশি ও হাঁচির মাধ্যমে ছড়ায়। ব্যাকটেরিয়া শ্বাসনালীতে বসতি স্থাপন করে, যে কারণে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা দেয়। সম্প্রতি মাইকোপ্লাজমায় আক্রান্ত হয়েছিল জার্মানির ১৩ বছরের শিশু এমিল।

বিজ্ঞাপন

সে জানায়, আমার গলা ব্যথা ছিল, আর দুই-তিনবার কানে ব্যথা হয়েছিল। প্রচুর কাশিও হচ্ছিল। এমিলের ১০ বছর বয়সি ভাই অস্কারও এই সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিল এবং তার নিউমোনিয়া হয়েছিল। তার শ্বাসকষ্ট, বমি, জ্বর এবং তীব্র কাশিসহ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

অস্কার বলেছে, কাশিতে ব্যথা হচ্ছিল। আর মাঝে মাঝে আমার মুখ বন্ধ হয়ে যেত। পিঠেও ব্যথা হতো। সপ্তাহ দুয়েক আগে অস্কারের নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। আজ তার চেকআপে দেখা গেছে, তার ফুসফুস পরিষ্কার আছে। গত কয়েক সপ্তাহ ও মাস ধরে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নিকোস কনস্টান্টোপোলোস আগের চেয়েও বেশিসংখ্যক শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাইকোপ্লাজমা সংক্রমণের চিকিৎসা করেছেন।

বিজ্ঞাপন

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নিকোস কনস্টান্টোপোলোস বলেন, একটি সমস্যা হলো ইনকিউবেশন পিরিয়ড, অর্থাৎ সংক্রমণ ও লক্ষণ প্রকাশের মধ্যবর্তী সময়। এটি এক থেকে তিন বা এমনকি, চার সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। এর অর্থ, সংক্রামিত ব্যক্তির শরীরে লক্ষণ দেখা দিতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়। সে কারণে রোগটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। 

এই শিশু বিশেষজ্ঞের ধারণা, মাইকোপ্লাজমায় আক্রান্ত প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষের নিউমোনিয়া হয়। তবে ফুসফুসের সংক্রমণ সাধারণত অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া, যেমন নিউমোককসাই, দ্বারা সৃষ্ট নিউমোনিয়ার তুলনায় হালকা হয়। তবুও হাসপাতালগুলিতে কখনো কখনো আরো গুরুতর সংক্রমণের ঘটনা বৃদ্ধি পায় বলে জানান মাইক্রোবায়োলজিস্ট ইয়োহানেস হুবার।

মাইক্রোবায়োলজিস্ট ইয়োহানেস হুবার জানান, গত সপ্তাহে চার-পাঁচজন বড় শিশু মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল - যা আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কখনও দেখিনি। মাইকোপ্লাজমা সংক্রমণের হার সাধারণত চক্রাকারে বৃদ্ধি ও হ্রাস পায়, অর্থাৎ, কোনো বছর সংক্রমণ কম দেখা গেলেও পরের বছর বেশি দেখা যায়। কিন্তু এবছর যা ঘটছে তা অস্বাভাবিক। ভালো খবর হলো, এটিপিক্যাল নিউমোনিয়া নামের এই রোগ নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিবায়োটিকে ভালো সাড়া দেয়।

বিজ্ঞাপন

হুবার বলেন, বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরকে লক্ষ্য করে। কিন্তু মাইকোপ্লাজমা-ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর থাকে না। তাই সেই অ্যান্টিবায়োটিকগুলি কাজ করে না। তবে রাইবোসোমকে আক্রমণ করা বেশ কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক, মাইকোপ্লাজমার বিরুদ্ধে কার্যকর। তাই আমরা সেগুলি ব্যবহার করি।

বিজ্ঞাপন

এই ডাক্তার মনে করছেন, মাইকোপ্লাজমা সংক্রমণের বর্তমান বৃদ্ধির কারণ কোভিড মহামারি। পালমোনারি ও ব্রঙ্কিয়াল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইয়ুর্গেন বের বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য আমরা যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, যেমন মাস্ক পরা, সেটা মাইকোপ্লাজমার সংক্রমণও প্রতিরোধ করেছিল। তাই আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা মাইকোপ্লাজমা নিয়ে তেমন ভাবেনি। সে কারণে আমরা এখন এমন সংক্রমণ বাড়তে দেখছি।

অন্য কথায়, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মাইকোপ্লাজমার বিরুদ্ধে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করতে হয়, তা আবার শিখতে হবে। তাহলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আবার কমে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

আরটিভি/এএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |