তুরস্কের আনাতোলি বার্তাসংস্থা পাশ্চাত্যের কয়েকটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা গাজায় আগ্রাসন বন্ধের জন্য ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এ আহ্বানের জবাবে নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আরও দুই থেকে তিন দিন সময়ের প্রয়োজন। গতকাল নেতানিয়াহু একটি বিমান ঘাটিতে বলেছেন, যতদিন প্রয়োজন ততদিন গাজায় বিমান হামলা চলবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইসরাইল এক সপ্তাহেরও বেশি সময় সময় ধরে আকাশ, স্থল ও সমুদ্র পথে গাজার ওপর ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোনও লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি। বিশেষ করে তাদের টার্গেটকৃত স্থাপনাগুলো এখনো ধ্বংস করতে পারেনি। এ কারণে তারা আরও হামলা চালিয়ে কিছুটা হলেও সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাইছে যাতে মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য দেখিয়ে তাদের হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে পারে। এর মাধ্যমে ইসরাইলের ভেতরে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে তা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন নেতানিয়াহু। অর্থাৎ পুরো বিষয়টিকে তিনি ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের কাজে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।
এদিকে, ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাবে গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধারাও ইসরাইলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ থেকে বোঝা যায় ফিলিস্তিনিদেরকে তারা দুর্বল করতে তো পারেনি এমনকি সামান্যতম লক্ষ্যও অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থায় ইসরাইল কিছুটা সাফল্য দেখিয়ে সসম্মানে যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে মনে করা হচ্ছে।
গাজায় আগ্রাসন অব্যাহত রাখার পেছনে ইসরাইলের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, যেসব আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে তাদের সামনে তেলআবিবের মানইজ্জত রক্ষা করা। কেননা আপোষকামী ওই আরব সরকারগুলো দখলদার ইসরাইলকে তাদের রক্ষক ও সমর্থক বলে মনে করে। আর এ কারণেই এ দেশগুলো ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে নিজ দেশের জনগণের পক্ষ থেকে কোনও হুমকি কিংবা বাইরে থেকে কোনও চাপ এলে ইসরাইলের সহযোগিতায় তা মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে খোদ ইসরাইলই ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। তারা নজিরবিহীন ব্যর্থতার স্বাদ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ইসরাইলি দৈনিক হারেতয এক প্রতিবেদনে গাজার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধকে ইসরাইলের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে অবিহিত করে লিখেছে, যতদ্রুত সম্ভব এ যুদ্ধের অবসান ঘটানো উচিত।
অবশ্য প্রথম থেকেই মার্কিন সরকারও যুদ্ধ অবসানের কথা বললেও ইহুদিবাদী লবিং গ্রুপের প্রচণ্ড চাপের মুখে বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলের প্রতি সমর্থন দিয়ে বক্তব্য রাখে। এমনকি প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরাইলকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহেরও অনুমতি দিয়েছে।
গাজায় আগ্রাসন অব্যাহত রাখার পেছনে ইসরাইলের তৃতীয় কারণ হচ্ছে, তারা ফিলিস্তিনিদের শক্তির বিষয়টি যাচাই করতে চায়। ইসরাইল চায় ফিলিস্তিনিরা তাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শন করুক। কেননা ইসরাইলিদের আশঙ্কা ফিলিস্তিনিদের হাতে এখনো শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
চতুর্থ কারণ হচ্ছে ইসরাইল ব্যাপক হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের সমস্ত অর্থনৈতিক অবকাঠামো এবং পানি, বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করছে। আর এভাবে তারা গাজার জনগণের কাছে এ দুরবস্থার দায় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। সূত্র: পার্সটুডে।
এসএস
আরটিভি’র সর্বশেষ নিউজ পেতে ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন...