ভালোবেসে অমর হয়েছে এমন গল্প আমরা বইয়ের পাতায় অসংখ্য পড়েছি। এবার বইয়ের পাতার বাইরে ভালোবেসে কাছের মানুষটিকে নিজের করে নিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন ফ্রান্সের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিতের প্রেমকাহিনি। এরইমধ্যে এ প্রেমকাহিনী অনেকেরই জানা।
আরটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য ম্যাখোঁ-ব্রিজিতের প্রেমকাহনসহ সাবেক প্রেসিডেন্টদের প্রেমকাহন তুলে ধরা হলো:
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ইমানুয়েল ম্যাখোঁ (৩৯) ও তাঁর স্ত্রী ব্রিজিতের (৬৪) প্রেমকাহিনি এটি। তাদের প্রেমকাহিনিতে অন্যরকম বিষয়ও আছে। প্রথমত, স্বামী তার স্ত্রীর তুলনায় অনেক তরুণ। বেশি বয়সী পুরুষ ও কম বয়সী নারীর প্রেম-বিয়ের সচরাচর যে ঘটনা দেখা যায়, তা থেকে এটা একেবারেই উল্টো। এর চেয়েও বড় বিষয় হলো—এ দুজন মানুষ বহু বছর ধরে একজন আরেকজনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ থেকেছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় এ দম্পতির আবেগঘন মুহূর্তের ছবি ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীজুড়ে।
অনেক মানুষ ম্যাখোঁ ও ব্রিজিতের বয়সের এ পার্থক্যের ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়ার দিকে আঙুল তুলতে পারেন। যদিও ট্রাম্প কখনো মেলানিয়ার নাটকের শিক্ষক ছিলেন না।
গেলো মাসে সিএনএন ফ্রান্সের মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্কের বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মতামত নেয়। এতে দেখা যায়, ফ্রান্সের লোকজন কম বয়সী পুরুষ ও বেশি বয়সী নারীর প্রেমের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের বদনাম বা কেলেঙ্কারিকে মোটেও আমল দেয়নি।
ফরাসি প্রেসিডেন্টদের এমন জটিল প্রেমের সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের চার সন্তান সেজোলেন রয়াল নামে এক রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থীর গর্ভে জন্ম নেয়া। তবে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনে বান্ধবী ভ্যালেরিয়ে থ্রিয়েরউয়েলার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
পরে তিনি ফরাসি মডেল জুলি গায়েটের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। প্যারিসে মোটরবাইকে করে ওই তরুণীর অ্যাপার্টমেন্টে যাবার সময় এক ট্যাবলয়েড পত্রিকার ক্যামেরায় ওঁলাদ ধরা পড়েন।
প্রেমের কোনো ঘটনায় একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাস্তায় মোটরবাইক দাবড়ে বেড়াচ্ছেন- ভাবা যায়! সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কথাই ধরা যাক। মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে তাঁর বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক বিরাট কেলেঙ্কারির জন্ম দেয়। এ কারণে তাকে অভিশংসনের মুখে পড়তে হয়েছিল। অথচ ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের ক্ষেত্রে কিছুই ঘটেনি।
আরেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি নির্বাচিত হবার পর স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। পরে তিনি ২০০৮ সালে মডেল ও পপ তারকা কার্লা ব্রুনিকে বিয়ে করেন। ব্রুনি তার তৃতীয় স্ত্রী। এর আগে সিলিয়া আতিয়াস ছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তাঁদের সম্পর্ক টিকেছিল। প্রথম স্ত্রী ম্যারি ডমিনিক কুলিওলির সঙ্গে সারকোজির দাম্পত্য জীবন ছিল ১৯৮২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত।
আরেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর প্রেম ছিল অ্যান প্যাজোঁ নামের এক নারীর সঙ্গে। মিতেরাঁর কাছ থেকে তিনি এক হাজার ২১৮টি প্রেমপত্র পেয়েছিলেন। এ প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে ‘লেটারস টু অ্যানি: ১৯৬২-১৯৯৫’এবং ‘ডায়েরি ফর অ্যানি: ১৯৬৪-১৯৭০’দুটি বইও প্রকাশ করে গালিমার্দ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৩ সালে অ্যানের সঙ্গে মিতেরাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন অ্যানের বয়স ছিল ২০ বছর। আর মিতেরাঁ ছিলেন ৪৭ বছরের সিনেটর, ১২ বারের মন্ত্রী এবং বিবাহিত ও দু’সন্তানের জনক। মিতেরাঁর স্ত্রীর নাম দানিয়েলি। মিতেরাঁ তার এ প্রেমের সম্পর্ক গোপন রাখতেন। প্রেমিকা অ্যানের গর্ভে মাজারিন নামে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। মৃত্যুর ১৪ মাস আগে মিতেরাঁ মাজারিনের সঙ্গে তার ছবি তুলতে পাপারাজ্জিদের সুযোগ দেন। ১৯৯৬ সালে মিতেরাঁর কবরে স্ত্রী দানিয়েল ও ছেলেদের পাশে অ্যানি ও মেয়ে মাজারিনকে একসঙ্গে দাঁড়াতে দেখেন দেশবাসী।
আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রোনাল্ড রিগ্যান ছাড়া অন্য সব প্রেসিডেন্ট এক স্ত্রী নিয়েই জীবন কাটিয়েছেন। বিল ক্লিনটনের সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা থাকলেও তাঁর বিয়ে টিকে আছে। জটিল প্রেমের সম্পর্ক আমেরিকার রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। তবে বর্তমানে রাজনীতিবিদদের মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিজীবনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসা নতুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও কেনেডিরও ব্যক্তিজীবনে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, তবে আধুনিক গণমাধ্যমকে সেটা একান্তে সরিয়ে রাখতে দেখা গেছে।
এপি/সি