ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ দখলদাররা কিয়েভে প্রতিদিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালেও এক মুহূর্তের জন্যও হাল ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবতে পারিনি আমরা।
বুধবার (১৬ মার্চ) সকালে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ভাষণে ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ান আগ্রাসনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন জেলেনস্কি। এ সময় তিনি আবারও ইউক্রেনে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা এবং রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান। এমন খবর জানিয়েছে সিএনএন।
জেলেনস্কির ভাষণের শুরুতে কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে কংগ্রেস সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় জেলেনস্কির উদ্দেশে তিনি বলেন, সাহসী নেতৃত্বের জন্য আপনার প্রতি কংগ্রেস সদস্যদের শ্রদ্ধা ও প্রশংসা রয়েছে। এসময় পর্দার সামনে বসে থাকা কংগ্রেসের সদস্যরা উঠে দাঁড়িয়ে জেলেনস্কিকে অভিবাদন জানান।
ভাষণের শুরুতে ইউক্রেনে রাশিয়ানদের ধ্বংসযজ্ঞের একটি ভিডিও প্রদর্শন করেন জেলেনস্কি। ভিডিও দেখিয়ে কংগ্রেসের সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইউক্রেনের আকাশ ব্যবহার করে কীভাবে দেশটিকে হাজারো মানুষের কবর বানিয়েছে রাশিয়া।
জেলনস্কি বলেন, গত আট বছর ধরেই ইউক্রেন রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করে আসলেও সম্প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে ইউক্রেনীয়রা। এসময় রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনের জনগণকে রক্ষার জন্য মার্কিন আইন প্রণেতাদের আহ্বান জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, আমাদের এই চাওয়া কি খুব বেশিকিছু?।
এদিকে সোমবার পর্যন্ত ২৮ লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেন থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। তাদের মধ্যে এক লাখ ২৭ হাজার অন্যান্য দেশের নাগরিক রয়েছেন। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনের যুদ্ধ ৭৫ লাখের অধিক শিশুর ওপর ‘বিধ্বংসী প্রভাব’ ফেলেছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের মধ্যে অন্তত ১৪ লাখই শিশু। এদের মধ্যে ১ লাখ ৫৭ হাজার শিশু তৃতীয় দেশের নাগরিক।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সামরিক অভিযান ঘোষণার কয়েক মিনিট পরেই ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে রুশ সেনারা। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেন ছেড়েছেন ২৭ লাখের বেশি মানুষ। এ ছাড়া যুদ্ধে ইউক্রেনের ১৩শ’ সেনা নিহত এবং রাশিয়ার ১২ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। তবে রাশিয়া বলছে, যুদ্ধে তাদের প্রায় ৫০০ সৈন্য নিহত এবং ইউক্রেনের আড়াই হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া জাতিসংঘ জানিয়েছে, রুশ অভিযানে ইউক্রেনে ৬৩৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪৬ শিশু রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইউক্রেনে আনুমানিক ৫ থেকে ৬ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে।
সূত্র : সিএনএন