জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল'র যৌথ উদ্যোগে কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের অডিটরিয়ামে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন করা হয়। গেলো ১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানটির মূল আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশের খ্যাতনামা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও নজরুলসঙ্গীত শিল্পী অনুপ বড়ুয়ার গাওয়া গান।
'অঞ্জলী লহ মোর, 'আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া', 'আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো' ও 'খোদারও প্রেমের সরাব পিয়ে'সহ নজরুলসঙ্গীতের জনপ্রিয় ৬টি গান পরিবেশন করেন শিল্পী অনুপ বড়ুয়া। দর্শকদের মূহুমূহু করতালির মাধ্যমে নজরুল সঙ্গীত পর্ব শেষ হয়।
এরপর দর্শকদের মন মাতাতে মঞ্চে আসেন বন্যা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশের বরেণ্য এ শিল্পীর অসাধারণ গায়কী আর রবীন্দ্রসঙ্গীতের চিরচেনা সুরের ধারায় আবিষ্ট হয় গোটা অডিটোরিয়াম। দর্শকদের অনুরোধে একে একে 'আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে', 'আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল', 'কতবারও ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া', 'ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে', 'সখী ভাবনা কাহারে বলে', এবং 'আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ'সহ ১২টি রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
সঙ্গীতের পাশাপাশি ছিল প্রাণবন্ত আলোচনা পর্ব। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এই উজ্জ্বল দুই নক্ষত্রের জীবনদর্শন এবং সাহিত্যকর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচক এবং বক্তাগণ গবেষণাধর্মী বক্তব্য উপস্থাপন করেন। রবীঠাকুর ও নজরুলের দর্শন, আধ্যাত্মবাদ এবং সাহিত্যকর্মের উপর আলোকপাত করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নজরুল ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানী ড. গুলশান আরা। 'একজন কূটনীতিকের চোখে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম' – বিষয়টি নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা করেন নিউইয়র্কে নিযুক্ত ভারতের কনসাল জেনারেল মিজ্ রিভা গাঙ্গুলী দাস।
এর আগে অনুষ্ঠানটির সূচনা পর্বে উপস্থিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো: শামীম আহসান এনডিসি। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, 'বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে উচ্চ আসনে তুলে ধরেছেন। সার্বজনীনতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা এ দুই বরেণ্য কবির লেখনীতে অত্যন্ত পরিস্ফুট। বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য সৃষ্টি যা বন্ধুপ্রতীম এ রাষ্ট্রদুটির জাতীয় ইতিহাসের অংশ। আর প্রেম ও দ্রোহের কবি নজরুলের অসাধারণ লেখনী, কবিতা ও গান ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালি জাতিকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
মোঃ শামীম আহসান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কলকাতার পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঢাকা নিয়ে আসেন এবং বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথের চর্চা ও গবেষণাকে জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন যা নজরুল ও রবীন্দ্র সৃষ্টিকর্মকে চিরভাস্মর রাখতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে।
আরো বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সফররত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ এবং নজরুল বিশেষজ্ঞ সুধীন দাস এবং একুশে পদক বিজয়ী নজরুল ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ড: করুণাময় গোস্বামীর সাম্প্রতিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
নিউইয়র্কে দায়িত্বরত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকসহ বিদেশী মেহমান, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাঙালিদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে একটি ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।
এইচএম