আইনশৃঙ্খলা, গণতন্ত্র এবং দেশের সংবিধান রক্ষায় প্রতিশ্রুতি রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।
শুক্রবার (১৫ জুলাই) জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
রনিল বলেন, আমি কখনোই কোনো অসাংবিধানিক কাজের পথ প্রশস্ত করব না বা সহায়তা করব না।
এ সময় আইনশৃঙ্খলার অবনতি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, খাদ্য, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে এবং জনগণকে সামনের বিপজ্জনক পরিস্থিতি বুঝতে হবে।
রনিল বলেন, কোনো রকম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনাপ্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং তিন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডারদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রনিল আরও বলেন, সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী আবার সম্পূর্ণরূপে ফিরিয়ে আনা উচিত এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে।
রাজনীতিবিদদের তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা একপাশে রেখে দেশের কথা ভাবতে আহ্বান জানান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ব্যক্তি রক্ষার চেয়ে দেশকে রক্ষা করুন। দেশকে টিকে থাকতে এবং রাজনীতিতে জড়িত থাকতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাষণ দেওয়ার সময় রনিল বলেন, প্রেসিডেন্টকে সম্বোধনের জন্য ‘হিজ এক্সিলেন্সি বা মহামান্য’ শব্দটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্টের পতাকা বিলুপ্ত করা হবে। কারণ, দেশকে একটিমাত্র পতাকা ঘিরে সাজাতে হবে, সেটি হলো জাতীয় পতাকা।
দেশটিতে চলমান বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বিক্রমাসিংহে বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গ্রহণযোগ্য। তবে কেউ কেউ নাশকতার কাজে লিপ্ত রয়েছে। কেউ কেউ নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সংসদে মিলিত হওয়ার সময় সংসদ সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। এই সংসদ সদস্যদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কোনো গোষ্ঠীকে সংসদীয় গণতন্ত্র নষ্ট করতে দেওয়া হবে না।
ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী দেশে সহিংসতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই গোষ্ঠী সম্প্রতি সৈন্যদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিনিয়ে নিয়েছে। ২৪ জন সেনা আহত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে ৭৩ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান দেশটির প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সুরিয়া।
তার আগে গণবিক্ষোভের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাতে ই-মেইলের মাধ্যমে দেশটির স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান গোতাবায়া রাজাপাকসে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, কয়েকবারের চেষ্টার পর বুধবার (১৩ জুলাই) মধ্যরাতে সামরিক একটি বিমানে স্ত্রী ও দুই দেহরক্ষীকে নিয়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান গোতাবায়া। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে পৌঁছান তিনি। সিঙ্গাপুর সাধারণত রাজনৈতিক আশ্রয়ের নিয়ম না থাকায় সেখান থেকে তিনি কোথাও যাবেন কি না, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে কিছু গণমাধ্যম বলছে, তিনি সৌদি আরব যাবেন। আবার কেউ বলছে, গোতাবায়া সংযুক্ত আরব আমিরাত যাবেন।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার কোনো রিজার্ভ নেই। ফলে মানুষের জন্য খাবার, ওষুধ, জ্বালানির মতো অতি জরুরি আমদানিও করতে পারছে না দেশটিতে। দেশটির সংকট নিরসনে ব্যর্থতার অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ চলছে।