মাত্র তিন মিনিটের কালবৈশাখী। তাতেই পুরো বেহাল পশ্চিমবঙ্গ। বিভিন্ন জেলায় মারা গেছেন আটজন। এটি ছিল মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী।
সোমবার (১৫ মে) বিকেল পাঁচটা নাগাদ মাত্র তিন মিনিটের জন্য প্রবল ঝড় হয়। এ সময় সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৮৪ কিলোমিটার। তাতেই প্রচুর গাছ উপড়ে পড়েছে, ঘরের টিনের ছাদ, বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। বেশ কয়েক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুরে ঝড়ের তাণ্ডব ছিল সবচেয়ে বেশি। হাওড়ায় তিনজন, ব্যারাকপুরে দুইজন, দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে একজন করে মানুষ মারা গেছেন।
হাওড়ায় পি কে রায় চৌধুরী লেনে ঝড়ের পর একটি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ঝুলতে থাকে। সেই তার গায়ে লাগার পরই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১২ বছর বয়সী খুশবু জাদব মারা যায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে একজন দারোয়ান গুরুতরভাবে আহত হন। বাগানে গাছ চাপা পড়ে মারা গেছেন রজনী প্রসাদ। ছোট আমসা গ্রামে ঘর চাপা পড়ে মারা গেছেন ৬৫ বছরের রামচন্দ্র মণ্ডল। পূর্ব মেদিনীপুরে কোলাঘাটের কাছে ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যায়। তাতে আশরাফ খান মারা যায়। এ ছাড়া বেলপাহাড়িতে গাছ পড়ে সনকা মহন্ত এবং বাজ পড়ে মালতী মুর্মু মারা গেছেন।
ঝড়ের কারণে প্রায় ঘণ্টাখানেক বিমান চলাচল বন্ধ থাকে। ওই সময় বাংলাদেশি একটি বিমান কলকাতায় নামতে না পেরে ফিরে আসে। দিল্লি, সুরাত, চেন্নাই থেকে আসা চারটি বিমান রাঁচি ও ভুবনেশ্বর চলে যায়। পরে আবার সেই বিমানগুলো কলকাতায় আসে। ঝড়ের সময় কলকাতা থেকেও ১২টি বিমান উড়তে পারেনি। ঝড় থামার পরে সেগুলো গন্তব্যে যায়।
ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে কোথাও তা চালু হতে রাত নয়টা বেজে যায়। দমদম স্টেশনের কাছে, শিয়ালদহ-বজবজ, শিয়ালদহ-লক্ষ্মীকান্তপুর, নৈহাটি শাখা, হাওড়া-বর্ধমান লাইনে বিভিন্ন জায়গায় হয় লাইনে গাছ পড়ে যায় অথবা বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ পড়ে, দমদমে রেললাইনে টিনের চাল এসে পড়ে বলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে অফিসফেরত মানুষ প্রবল অসুবিধার মধ্যে পড়েন।
কলকাতায় মেট্রোরেল ঝড়ের পর কিছুটা দেরিতে চললেও কিছুক্ষণ পর তা স্বাভাবিক হয়। বিদ্যুৎ নেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ের পর হয় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে অথবা বিদ্যুতের লাইনের ওপর গাছ পড়েছে। তার ছিঁড়ে দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না। কাকদ্বীপ, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, রানিগঞ্জে অনেকক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না। কলকাতাতেও অনেক গাছ পড়েছে। তার ছিঁড়ে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানায়, এই সপ্তাহজুড়েই ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।