ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডোর। শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নয়; এটি ভারতের শক্তি, নিরাপত্তা, সরবরাহ চেইন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জাতীয় নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। এই করিডোর আগামী দিনে বিশ্বব্যাপী ভারতের ভাবমূর্তিকে শক্তিশালী করবে। ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য বিদেশে প্রকল্পগুলিতে জড়িত হওয়ার দরজা উন্মুক্ত করবে। ভারতের প্রভাব এবং অর্থনৈতিক প্রসার বৃদ্ধি করবে। এই করিডোরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং পরস্পর নির্ভরতা বৃদ্ধি করে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিতে অবদান রাখতে সচেষ্ট হবে।
এটি নতুন ভারতীয় রুট যা এশিয়াকে ইউরোপের সাথে সংযুক্ত করে অর্থনৈতিক একীকরণকে জোরদার করবে। এই অর্থনৈতিক করিডর প্রকল্পটি ভারতের জি-২০ নেতৃত্বের জন্য একটি যুগান্তকারী অর্জন। করিডোরটি একটি বহুজাতিক রেল ও শিপিং প্রকল্প যা ভারতকে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের সাথে সংযুক্ত করবে।
এই সমঝোতা স্মারকে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালি, ফ্রান্স এবং জার্মানি স্বাক্ষর করেছে। এটি দুটি পৃথক করিডোর নিয়ে গঠিত। পূর্ব করিডোরটি পশ্চিম উপকূলের ভারতীয় বন্দর মুন্দ্রাকে ফুজাইরার সাথে সংযুক্ত করবে তারপরে সৌদি আরব এবং জর্ডান হয়ে ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রেন ব্যবহৃত হবে। পশ্চিম করিডোর হাইফা থেকে ফ্রান্সের মার্সেই এবং ইতালি ও গ্রিসের অন্যান্য বন্দরসহ ইউরোপের বিভিন্ন বন্দর পর্যন্ত চলে যাবে।
করিডোরটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও পারস্পরিক আস্থাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করবে। এছাড়া রুট বরাবর সংঘাত পূর্ণ অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা প্রচার করবে। এটি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে যোগাযোগ এবং অবকাঠামো আরও শক্তিশালী করবে। উন্নত অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশগুলিকে একত্রিত করতে সাহায্য করবে।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে এই অঞ্চলটিকে ‘চ্যালেঞ্জ, দ্বন্দ্ব বা সংকটের উৎস’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। চুক্তিটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে সহায়তা করবে এবং তাদের বৈশ্বিক ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সহায়তা করবে।
করিডোর সাপ্লাই চেইনের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াবে এবং বিশ্বব্যাপী বাধার সময়ও প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রবেশ নিশ্চিত করবে, অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করবে। ভারত-মধ্যপ্রাচ্য করিডোর বিভিন্ন কারণে চীনের বিস্তৃত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। কারণ করিডোরের কৌশলগত অবস্থান ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপকে সংযুক্ত করে বাণিজ্যের জন্য আরও সাশ্রয়ী রুট সৃষ্টি করেছে।
ভারত শুধু একটি করিডোর তৈরি করছে না; এটি বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতার নতুন পথ তৈরি করেছে, চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে রূপান্তর করছে। ভারতের এই ঐতিহাসিক প্রয়াস উন্মোচিত হওয়ার সাথে সাথে জাতিগুলির ভাগ্যকে পুনর্নির্মাণ করার সুযোগ পাবে এবং একটি আন্তঃ সংযুক্ত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।