ঢাকাবুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

হামাস কারা, কী চায় তারা, কেন এই আকস্মিক হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

সোমবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৩ , ০৬:২৩ পিএম


loading/img
ছবি : সংগৃহীত

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার ভোরে। ইসরায়েলিদের ওপর নজিরবিহীন রকেট হামলা চালায় হামাস। মাত্র ২০ মিনিটে হাজার পাঁচেক রকেট ছুড়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় তারা। ‘নিশ্ছিদ্র সুরক্ষাবলয়’ ভেঙে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে হামাসের যোদ্ধারা।

বিজ্ঞাপন

শুরুতে হতবাক হলেও দ্রুত পাল্টা জবাব দেয় ইসরায়েল। পাল্টা আক্রমণ করে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। এরপর থেকে ফিলিস্তিনে মুহুর্মুহু বোমা পড়ছে।

ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের আট শতাধিক নাগরিকের প্রাণহানি হয়েছে, যার মধ্যে দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি সংগীত উৎসবেই নিহত হয়েছেন ২৫০ জনের বেশি। অন্যদিকে ফিলিস্তিন বলছে, ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় প্রায় ৫১০ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে এখন পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

শনিবারের হামলার পর রোববার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোষণা দেয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করতে বিমান বহনকারী একটি জাহাজ ইসরায়েলের কাছে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘ এবং কঠিন যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজায় বোমা হামলা চালাচ্ছে। সেখানে স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা।

এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন সামনে এসেছে, হামাস কারা, কী চায় তারা, আকস্মিক হামলার কারণটাই বা কী-সে সম্পর্কে প্রতিবেদন করেছে আল জাজিরা।

বিজ্ঞাপন

হামাস কারা :
হামাস মানে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন এবং আরবি ভাষায় এর অর্থ ‘উৎসাহ’। ২০০৭ সাল থেকে প্রায় ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের গাজা উপত্যকাকে নিয়ন্ত্রণ করে হামাস। এখানে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ইসরায়েলি দখলদারির অবসানের দাবিতে ‘ইন্তিফাদা’ বা ফিলিস্তিনি গণজাগরণ শুরুর পর ১৯৮৭ সালে হামাস গঠিত হয়।

কট্টর ইসরায়েলবিরোধী আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিন ও আবদেল আজিজ আল-রান্তিসির হাতে গাজায় হামাস প্রতিষ্ঠা পায়। ২০০৪ সালের মার্চে গাজায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন আহমাদ ইয়াসিন। পরের মাসেই নিহত হন আজিজ আল-রান্তিসি।

সংগঠনটির সনদ অনুযায়ী, তারা ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আর তাদের চাওয়া হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে বর্তমান ইসরায়েল, গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে গঠিত একক ইসলামি রাষ্ট্র।

কী চায় হামাস :
হামাস প্রাথমিকভাবে দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়। প্রথমত, এর সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাশেম ব্রিগেডসের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, ফিলিস্তিনে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা। বিশেষত ইসরায়েলি দখলদারত্বের কারণে ভুক্তভোগী ফিলিস্তিনিদের কল্যাণে কাজ করা।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর নির্ধারণ করা ফিলিস্তিন সীমান্ত মেনে নিয়েছে হামাস। তবে সংগঠনটি কখনোই স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্ব মানেনি। হামাস নেতা খালেদ মিশাল ২০১৭ সালে বলেছিলেন, দখলদারি যত দিন ধরে চলুক না কেন, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের এক ইঞ্চি মাটিও আমরা ছাড়ব না।

এমনকি ১৯৯০-এর দশকে ইসরায়েল ও পিএলওর মধ্যকার সমঝোতাকে নাকচ করে দিয়েছে হামাস। এ সমঝোতা অসলো শান্তি চুক্তি নামে পরিচিত। নানা সময় চালানো হামলায় ইসরায়েলি সেনা, বসতি স্থাপনকারী এবং বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, মিসর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে হামাস ও এর সামরিক শাখা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত।

হামাসের সমর্থক কারা :
হামাসের আঞ্চলিক সমর্থকের মধ্যে রয়েছে ইরান, সিরিয়া ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এরা সবাই মধ্যপ্রাচ্য এবং ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন নীতির বিরোধিতা করে।

মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ। ইসরায়েলবিরোধী অভিন্ন মনোভাব সশস্ত্র এই সংগঠনকে হামাসের কাছাকাছি এনেছে। সংগঠন দুটি অনেক ক্ষেত্রেই একযোগে কার্যক্রম চালায়। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একত্র হয়ে গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সামরিক কার্যকলাপের সমন্বয়কারী হিসেবে ইসলামিক জিহাদের গুরুত্ব রয়েছে।

তবে বিভিন্ন সময় ইসলামিক জিহাদের সঙ্গে হামাসের সম্পর্কে ফাটল ধরতেও দেখা গেছে। হামাস যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ করার জন্য ইসলামিক জিহাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তখন দুই গ্রুপের মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দেয়।

হঠাৎ হামলার কারণ কী :
হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে চরম নৃশংসতার শিকার হয়ে আসছেন ফিলিস্তিনিরা। এর প্রতিক্রিয়ায় তারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চলমান নৃশংসতা বন্ধ করবে। পবিত্র স্থান আল-আকসায় সংঘাত বন্ধ করবে। এটাই আমাদের চাওয়া। এসবই এবারের হামলার পেছনের কারণ।

গত শনিবারের হামলাকে ‘কেবল সূচনা’ বলে উল্লেখ করেছে হামাস। সেই সঙ্গে এ লড়াইয়ে অন্য সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলোকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দাইফ বলেছেন, পৃথিবীর বুকে শেষ দখলদারির অবসান ঘটাতেই এই যুদ্ধ। এটাই হলো সেই মহাযুদ্ধের দিন।

এবারের হামলার পর অনেক ইসরায়েলিকে আটক করেছে হামাস। এই ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরও হামাসের জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র ওসামা হামদান বলেন, হামাসের পক্ষ থেকে কখনোই বেসামরিক মানুষের ওপর আক্রমণ করা হয়নি।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |