উগান্ডায় গাড়ির ব্যবহৃত তেল থেকে আয়

ডয়চে ভেলে

শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ , ০৩:৩৮ পিএম


তেল
সংগৃহীত ছবি

ব্যবহৃত তেল ঠিক জায়গায় না ফেললে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। উগান্ডার মতো আফ্রিকার দেশগুলোতে এই সমস্যা অনেক বেশি। উগান্ডার মোজেস জিঙ্গো ব্যবহৃত তেল রিসাইকেল করার পদ্ধতি বের করেছেন।

বিজ্ঞাপন

এতে যেমন তার আয় হচ্ছে, তেমনি পরিবেশেরও লাভ হচ্ছে। গাড়ির মেকানিক হিসেবে আগে ব্যবহৃত তেল ফেলে দিতেন জিঙ্গো। করোনার সময় তার চাকরি চলে গিয়েছিল। এরপরই তিনি ভাগ্যের খোঁজ পান- কারণ ব্যবহৃত তেলের মূল্য বুঝতে পেরেছিলেন তিনি।

জিঙ্গো বলেন, আমরা এখন তেল রিসাইকেল করি। আমরা এখন জানি, তেল দূষিত হয়ে গেলেই তা মূল্যহীন হয়ে যায় না। আমরা এটা বিশুদ্ধ করে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করি। এভাবে রিসাইকেল চলতে থাকে। ব্যবহৃত তেল রিসাইকেল করা কিছুটা ঝামেলার। তবে লাভ আছে।

বিজ্ঞাপন

জিঙ্গো একটি ছোট ব্যবসা গড়ে তুলেছে। সেখানে তিনজন কাজ করেন। তারা নিয়মিত কাম্পালার ৫০টি গাড়ির ওয়ার্কশপে ঢুঁ মেরে ব্যবহৃত তেল সংগ্রহ করেন। তাদের একজন মাথিয়াস সেগুয়া।

তিনি বলেন, ডিজেল ইঞ্জিন থেকে ব্যবহৃত তেল সংগ্রহ করার পর আমি সেটি সতর্কতার সঙ্গে সংরক্ষণ করি। এভাবে আমি কিছু অর্থ আয় করি, যেটা দিয়ে আমি আমার অন্য প্রয়োজন মেটাই। এর মূল্য বোঝার আগে মেকানিকেরা ব্যবহৃত তেল ফেলে দিত। আমরা তেল, কুল্যান্ট আর হাইড্রোলিক ফ্লুইড ফেলে দিতে পারি না।

জিঙ্গো বর্তমানে মাসে প্রায় এক হাজার লিটার ব্যবহৃত তেল রিসাইকেল করেন। ময়লা আর পানি মূল দূষক। প্রথমে তিনি ব্যবহৃত তেল ফোটান, যেন পানি বাষ্প হয়ে যায়। এরপর সালফারের মতো বিভিন্ন কেমিক্যাল যোগ করেন। এভাবে ধুলো ও অন্যান্য ময়লা দূর করেন।

বিজ্ঞাপন

জিঙ্গো বলেন, ব্যবহৃত তেল রিসাইকেল করার পর যা পাওয়া যায় তাকে বেজ তেল বলে। একটা কারণে এটাকে বেজ তেল বলা হয়। এই বেজ তেল দিয়ে অনেক লুব্রিকেন্ট তৈরি করা হয়। রিসাইকেল করে প্রায় ৮০ শতাংশ তেল উদ্ধার করেন জিঙ্গো। বেজ তেল দিয়ে তিনি গ্রিজ লুব্রিকেন্ট তৈরি করেন। কাম্পালার গাড়ির ওয়ার্কশপে এগুলো বিক্রি করেন তিনি। বাকি ২০ শতাংশের রং পিচের মতো কালো হয়।

এটা বিটুমিন- অ্যাসফল্ট তৈরির জন্য আদর্শ। রাজধানীর বেশকিছু দোকানে এটা সরবরাহ করে থাকেন জিঙ্গো। ব্যবসা তার ও পরিবেশের জন্য ভালো। আফ্রিকার অনেক দেশে ব্যবহৃত তেল যেখানে সেখানে ফেলে দেয়া হয়। ফলে মাটি ও পানি দূষিত হয়। কাম্পালা থেকে ভিক্টোরিয়া লেকের দূরত্ব বেশি নয়। সেখান থেকে উগান্ডার বেশিরভাগ খাবার পানি আসে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও শহরের বর্জ্য সেখানকার একটি বড় সমস্যা। তেল দূষণের বিষয়টি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও ভালো নয়। সাম্প্রতিক সময়ে পানি পানের উপযোগী করার খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মাসে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন উগান্ডান শিলিং বা প্রায় পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ইউরো। 

পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্পোরেশনের স্যামুয়েল অ্যাপেডেল বলেন, কারখানার বর্জ্য, ব্যবহৃত তেল ঠিক জায়গায় না ফেলা ও শিল্পখাতের বর্জ্যের কারণে পানির উত্সগুলি ক্রমে দূষিত হচ্ছে। আমরা পানিশোধন করতে প্রায় ১.১ বিলিয়ন উগান্ডান শিলিং খরচ করব। বর্তমানে পানিশোধনের জন্য গড় রাসায়নিক খরচ প্রতি মাসে ২.৩ বিলিয়ন উগান্ডান শিলিং। এটা অনেক বেশি এবং আমরা এই খরচ যেন মানুষকে দিতে না হয় সেই চেষ্টা করি। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ রক্ষা সংস্থার হিসাব বলছে, পাঁচ লিটার ব্যবহৃত তেল প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন লিটার বিশুদ্ধ পানি দূষিত করতে পারে। ফলে এক লিটার রিসাইকেল করার বিষয়টিও অনেক বড় ব্যাপার।

আরটিভি/এএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission