মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট বলছে, ২০২৪-এ মোট মৃত্যুদণ্ডের ৯০ ভাগ হয়েছে ইরান, সৌদি আরব ও ইরাকে। বাড়ছে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৪-এ সারা পৃথিবীর মৃত্যুদণ্ডের নিরিখে সবার উপরে রয়েছে ইরান। ২০২৪-এ মোট ৯৭২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-এ দেয়া হয়েছিল ৮৫৩ জনকে। সৌদি আরবে ৩৪৫ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। ২০২৩-এর তুলনায় যা দ্বিগুণ। অন্যদিকে, ইরাকে ৬৩ টি মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২০২৪-এ। যদিও অ্যামনেস্টির রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার নিরিখে শীর্ষে রয়েছে চীন।
যে পরিমাণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে তার ভিত্তিতে ওই মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে ২০২৪-এ চীনে মৃত্যুদণ্ড হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও চীনের তরফ থেকে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনামেও মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেছে ওই সংস্থা। রাজনৈতিক বিরোধী নিধনে মৃত্যুদণ্ড সৌদি আরবের শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা থাকলেও অ্যামনেস্টির মতে বিরোধী স্বর, বিশেষ করে রাজনৈতিক বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ করছে শাসক।
অ্যামনেস্টি আরো জানিয়েছে, দেশের সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের বাগে রাখতে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ব্যবহার করে সৌদি। এই সম্প্রদায় ২০১১ থেকে ২০১৩-তে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছিল।
গত বছর অগাস্টে আল কায়দার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চক্রান্তের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড হয় আবদুল মাজিদ আল-নিমরের। যদিও আদালতের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, তিনি সরকার বিরোধী প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিলেন।
অ্যামনেস্টির মৃত্যুদণ্ড বিশেষজ্ঞ কিয়ারা সানজর্জিও জানান, শাসক নিজেদের স্বার্থরক্ষার প্রয়োজনে কীভাবে সন্ত্রাসবাদের ইস্যুকে ব্যবহার করে তা আমরা মিডিয়াতে দেখতে পাই। বিরোধী স্বর বন্ধ করার জন্য মৃত্যুদণ্ড ব্যবহার করে শাসক। ২০২২-এ পুলিশি হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল ইরান। সেই প্রতিবাদে সামিল হওয়ার অপরাধে ২০২৪-এও মৃত্যুদণ্ড হয় দুজনের। তার মধ্যে একজন ২৩ বছরের মোহাম্মদ গোবাদলু যিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন বলে জানা যায়।
অন্যদিকে, ২০২৪-এর মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে ৪০ শতাংশই মাদক পাচার ও ব্যবহারের কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।
অ্যামনেস্টির রিপোর্ট অনুযায়ী চীন এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশে মাদক ব্যবহারের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের প্রচুর ঘটনা ঘটে। পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আমেরিকা, যেখানে একাধিক রাজ্যে মৃত্যুদণ্ড এখনো নিষিদ্ধ নয়। ২০২৩-এ ২৩টির জায়গায় গতবছর ২৪টি মৃত্যুদণ্ড হয় সেখানে। তবে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া এবং ইন্ডিয়ানাতে নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার দেখা গেছে।
মোট ১৪৫টি দেশ থেকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি উঠে গেছে।
আরটিভি/এএইচ