ওয়াকফ আইন নিয়ে অন্তর্বর্তী নির্দেশিকার পথে সুপ্রিম কোর্ট

ডয়চে ভেলে

বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ , ০৫:২৯ পিএম


ওয়াকফ আইন নিয়ে অন্তর্বর্তী নির্দেশিকার পথে সুপ্রিম কোর্ট
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইন সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। বুধবার মামলাকারীরা নতুন আইনটির ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছিল। কিন্তু গোটা আইনটির ওপর স্থগিতাদেশ দিতে চায়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে, তিনটি বিষয় উল্লেখ করে তার ওপর অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতে চেয়েছিলেন বিচারপতিরা। কিন্তু কেন্দ্রের আইনজীবী আদালতের কাছে সময় চান। বলা হয়, এবিষয়ে কেন্দ্র তাদের মতামত জানাতে চায়। এরপরেই বিচারপতিরা জানান, বৃহস্পতিবার তাদের বক্তব্য শোনা হবে, তারপর সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আছেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তারাও এই মামলাটি শুনছেন। বুধবার সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তোলে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। তার মধ্যে মূল তিনটি বিষয় হলো, সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীন আদালতের নির্দেশে ওয়াকফ সম্পত্তি ঘোষিত হওয়া কোনো জায়গা বা প্রতিষ্ঠানকে ওয়াকফ নয় বলে ঘোষণা করা যাবে না। ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে জেলাশাসক তদন্ত চালাতে পারেন কিন্তু কোনো নির্দেশ দিতে পারবেন না। এবং তৃতীয়ত, ওয়াকফ বোর্ড এবং কাউন্সিলের সদস্যদের মুসলিম হতেই হবে। কেবলমাত্র পদাধিকার বলে অমুসলিম ব্যক্তিরা এই বোর্ড বা কাউন্সিলে যোগ দিতে পারেন।

বুধবার এই তিন নির্দেশিকা জারি করার কথা বিবেচনা করছিল সুপ্রিম কোর্ট। শেষমুহূর্তে কেন্দ্র জানায়, তারা এবিষয়ে আরও কিছু বক্তব্য জানাতে চায়। তখন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশিকা জারি না করে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রকে বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেয়।

বিজ্ঞাপন

সংশোধিত ওয়াকফ বিল স্থগিত করার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা হয়েছে, তার হয়ে সওয়াল করছেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবল। এদিন আদালতে তার সঙ্গে তীব্র বিতর্ক হয় সরকারপক্ষের আইনজীবী তুষার মেহতার। কপিল প্রশ্ন তোলেন, কেন অমুসলিমদের ওয়াকফ বোর্ডে রাখার কথা বলা হয়েছে নতুন আইনে? প্রধান বিচরপতি জানান, কেবলমাত্র দুইজন অমুসলিম ব্যক্তিকে সেখানে রাখার কথা বলা হয়েছে। এর উত্তরে কপিল জানান, অন্তত দুইজন অমুসলিম ব্যক্তিকে রাখার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, চাইলে এর চেয়ে বেশি অমুসলিম ব্যক্তিকেও ওয়াকফ বোর্ডে ঢোকানো সম্ভব। এরপরেই সরকারপক্ষের আইনজীবীকে বিচারপতি খান্না প্রশ্ন করেন, কোনো হিন্দু বোর্ডে মুসলিম প্রতিনিধিকে বসাতে রাজি হবে সরকার?

আদালত এদিন ওয়াকফ বিষয়ক তদন্তে জেলাশাসক বা সমমর্যাদার অফিসারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। কপিলের বক্তব্য ছিল, জেলা শাসক সরকারি কর্মচারী। আদৌ তার ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার আছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন কপিল। বিচারপতিরাও এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই ওয়াকফ বিল নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছে। বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও বিলটি পাশ করিয়েছে সরকার। রাজ্য সভায় ওয়াকফ বিতর্কে ঠিক এই প্রশ্নগুলিই তুলেছিলেন কপিল। এদিন আদালতে আরও একবার একই সওয়াল করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য শোনার পর আদালত কোনো নির্দেশ দেয় কি না, সে দিকেই তাকিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল। বস্তুত, ওয়াকফ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্যে ওয়াকফ নিয়ে প্রতিবাদ সহিংস হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই মামলাটি ব্যতিক্রমী।

আরটিভি/আরএ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission