ঢাকারোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

কাতারে ইরানের হামলার শিকার সেই মার্কিন ঘাঁটি সম্বন্ধে যা জানা যাচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫ , ০৭:৫৪ পিএম


loading/img
ছবি : সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়ানোর জবাবে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে তেহরান। এর মধ্যে কাতারের যে ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান, সেই আল উদেইদ ঘাঁটিটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তম মার্কিন ঘাঁটি।

বিজ্ঞাপন

রাজধানী দোহার কাছে অবস্থিত এই ঘাঁটি থেকেই পরিচালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড বা সেন্ট-কম। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বিমান বাহিনীর কার্যক্রমও এখান থেকেই পরিচালিত হয়। প্রায় আট হাজার মার্কিন সৈন্য আল উদেইদ-এ মোতায়েন রয়েছেন।

আল উদেইদ ঘাঁটিতে ইরান সোমবার রাতে যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তাতে কোনও মার্কিন বা কাতারি আহত বা নিহত হননি বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই ইরানি হামলাকে ‘দুর্বল’ বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

বিজ্ঞাপন

আল উদেইদ-সহ মধ্যপ্রাচ্যের ১২টিরও বেশি দেশে মার্কিন সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি ওই অঞ্চলের জলসীমায়ও যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ মোতায়েন করা আছে।

বর্তমানে এসব ঘাঁটিতে সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আছেন। তাছাড়া রয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ।

ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর ওপরে মার্কিন হামলার পরেই উপগ্রহ থেকে তোলা কিছু ছবিতে দেখা গিয়েছিল যে আল উদেইদ ঘাঁটির টারম্যাক থেকে অনেকগুলো বিমান সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

মনে করা হচ্ছে যে ইরানের ওপরে হামলার পরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই ওই বিমানগুলিকে উন্মুক্ত টারম্যাক এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিবিসির নর্থ অ্যামেরিকা সম্পাদক সারা স্মিথ বলছেন যে সোমবারের ওই হামলায় আশ্চর্য হওয়ার বিশেষ কিছু নেই। সপ্তাহান্তে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর ওপরে যে হামলা চালিয়েছে, তারপরে যুক্তরাষ্ট্র আশাই করছিল যে এরকম হামলা হতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন সব মার্কিন বাহিনীই চূড়ান্ত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং এধরনের হামলার জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে মার্কিন বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ‘ইরাক অপারেশন’ এর সদর দফতর আল উদেইদ ঘাঁটি। আবার এই ঘাঁটির রানওয়েটিই উপসাগরীয় অঞ্চলের ঘাঁটিগুলির মধ্যে দীর্ঘতম।

যুক্তরাজ্যের বাহিনীও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আল উদেইদে অবস্থান করে, যদিও এই ঘাঁটিকে কখনো সখনো আবু নাখলা বিমানবন্দর হিসেবেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

আল উদেইদ ঘাঁটিতে মার্কিন বাহিনীকে ২০০০ সালে প্রবেশের অনুমতি দেয় কাতার। পরের বছর, ২০০১ সালে মার্কিন বাহিনী ঘাঁটি পরিচালনার ভার নেওয়ার পরে ২০০২ সালে দোহা আর ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়।

লন্ডনভিত্তিক বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা গ্রে ডাইনামিক্সের তথ্য অনুযায়ী ২০০২ সালের ডিসেম্বরের ওই চুক্তির মাধ্যমেই কাতারে মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ২০২৪ সালে কাতারের সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে সেদেশে মার্কিন বাহিনীর অবস্থান পরবর্তী ১০ বছরের জন্য বাড়িয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে ইরানের ওপরে মার্কিন হামলার প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে ইরান যদি পাল্টা হামলা চালায়, তার জবাব ‘আরও অনেক শক্তিশালী’ হবে।

আল উদেইদের ওপরে হামলায় প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী কোনও হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও পাল্টা হামলার জন্য প্রেসিডেন্টের ওপরে ব্যাপক চাপ আসবে, যাতে প্রমাণ করা যায় তিনি যে হুমকি দিয়েছিলেন, সেগুলো ফাঁকা আওয়াজ ছিল না।

মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা সফল হয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান। ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিওরিটি কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলছে যে, যদিও কাতারে মার্কিন ঘাঁটি 'গুঁড়িয়ে দিয়েছে' ইরান, তবে এই হামলায় কাতার বা সেদেশের মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে কাতারের সঙ্গে ‘যে ঐতিহাসিক এবং উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ ইরান।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ওই বিবৃতি উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে ঠিক যতগুলো বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র, ঠিক ততগুলো ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করা হয়েছে’ মার্কিন ঘাঁটির ওপরে তাদের জবাবি হামলায়।

এদিকে কাতার জানিয়েছে ইরানের সব ক্ষেপণাস্ত্রই আটকানো হয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, আমরা মনে করি এটা কাতার রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, তার আকাশ সীমা, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের ঘোষণা পত্রের স্পষ্ট উল্লঙ্ঘন।

তিনি আরও বলেন, কাতারের বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘সফলভাবেই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আটকাতে সক্ষম হয়েছে’ এবং ঘাঁটি আগেই খালি করে দেওয়া হয়েছিল।

আরটিভি/একে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |