• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

বিক্রেতারা এশিয়ার পোশাক কারখানাগুলো থেকে অর্ডার বাতিল করছে, চাকরি হারাবে কয়েক লাখ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ২৮ মার্চ ২০২০, ২০:৩৮
Retailers Cancel Orders From Asian Factories, Threatening Millions of Jobs
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল থেকে নেয়া

চীনে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব কমে আসার মধ্যেই খুচরা বিক্রেতারা পোশাকের অর্ডার স্থগিত এবং বাতিল করছে, যার ফলে এশিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানার কয়েক লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

করোনার কারণে কনজিউমার শাটডাউনের প্রথম শিকার হয়েছে এইচঅ্যান্ডএমের মালিক হেনেস এবং মরির্টজ এবির মতো বিশ্বের ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ জায়ান্টের সরবরাহকারীরা। তাদের ব্যবসায়িক মডেল হচ্ছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কারখানা থেকে খুচরা আউটলেটগুলোতে অর্ডার পেতে সক্ষম হওয়ার ওপর নির্ভর করে। তারা এখন কারখানার অর্ডার স্থগিত করছে বা বাতিল করছে, এর ফলে অন্যান্য পণ্য যেমন কসমেটিকস, স্মার্টফোন ও গাড়ির এশিয়ান নির্মাতারাদের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে।

দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, এসোসিয়েটেড ব্রিটিশ ফুডস পিএলসি’র মালিকানা প্রিমার্ক, যাদের ইউরোপজুড়ে দোকান রয়েছে এবং ইডব্লিউএম গ্রুপের মালিকানাধীন যুক্তরাজ্যের আরেকটি খুচরা বিক্রেতা পিককস স্টোর্স লিমিটেড প্রকাশ্য বিবৃতি ও নোটিশের মাধ্যমে তাদের অর্ডার স্থগিত বা বাতিল করেছে।

জিন্স প্রস্তুতকারক বাংলাদেশি একজন গার্মেন্টস মালিক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা পিককসের জন্য প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার জিন্স তৈরি করেছি কিন্তু তারা একটি চিঠি দিয়ে অর্ডার বাতিল করেছে। তারা যদি এই পণ্য না নেয়, তাহলে আমার অনেক ক্ষতি হবে। আমি এগুলো দিয়ে কি করবো?

মোস্তাফিজ জানান, তিনি জিন্সের দাম পাওয়ার জন্য পিককসের সঙ্গে আলোচনা করছেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে যাতে দূরত্ব তৈরি না হয় সেজন্য ফ্যাক্টরি মালিকরা সাধারণত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয় না।

গত ১৭ মার্চ মোস্তাফিজকে এক ইমেইলে নিজেদের এই সিদ্ধান্তকে ‘চরম পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করে পিককস। তবে অন্য কারও কাছ থেকে পণ্য নেয়া হবে না বলেও জানায় তারা। মোস্তাফিজ ফিরতি ইমেইলে তাদের জানায়, এখন ‘সহযোগিতা করার সময় এবং অংশীদারিত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া উচিত নয়। ওই কাপড়ের অর্ডারের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করার জন্য অনুরোধে সাড়া দেয়নি পিককস।

যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার গ্রুপ পিএলসি চলতি সপ্তাহে সরবরাহকারীদের কাছে একটি নোট পাঠিয়ে হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষামান রয়েছে এমন অর্ডার স্থগিত করে।

মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের জন্য এশিয়ার সোর্সিংয়ের ব্যবস্থা করা জন ম্যাকক্লিউর লিখেছেন, যেহেতু যুক্তরাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে তাই আমাদের এই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তিনি কারখানাগুলোকে সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কাঁচামাল কিনে ‘সবার জন্য এই কঠিন সময় আরও জটিল করে না’ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

এমঅ্যান্ডএস'র একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা হাতে সময় থাকতে অর্ডার স্থগিত করার মতো পদক্ষেপ এবং আমাদের ‘অংশীদার এবং সরবরাহকারীদের সহায়তার’ যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

প্রিমার্ক ও এইচঅ্যান্ডএম বলছে তারাও নতুন অর্ডার স্থগিত করছে। এইচএন্ডএম বলছে, ‘সাম্প্রতিক অর্ডারগুলোর সম্ভাব্য পরিবর্তনের’ মূল্যায়ন করে দেখছে তারা। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৪০০ কারখানা থেকে ক্রয় করে, পোশাক চীন ও বাংলাদেশ থেকে কিনে থাকে।

এইচএন্ডএমের একজন মুখপাত্র উলরিকা আইজাকসন বলেছেন, ‘সরবরাহকারীদের প্রতি আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি অক্ষুণ্ণ থাকবে। তবে এই চরম পরিস্থিতিতে আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার।

এবিএফের একজন মুখপাত্র বলেছেন যে, পোশাকের অর্ডার বাতিল করা ছাড়া এই আর্থিক ক্ষতি কাটানো কারও পক্ষে সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, মাঝপথে থাকা ইনভেন্টরির জন্য তারা অর্থ দিচ্ছেন এবং আর্থিক ক্ষতি প্রশমনের জন্য বিভিন্ন পথ বের করতে সরবরাহকারীদের আলোচনা চলছে।

এদিকে এক আবেগঘন ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট রুবানা হক খুচরা বিক্রেতারা ইতোমধ্যেই যেসব পণ্যের অর্ডার দিয়েছেন সেগুলোর অর্থ পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতারা বাংলাদেশি ফ্যাক্টরিগুলোকে সহায়তা না করলে বাংলাদেশের ৪১ লাখ গার্মেন্টস কর্মী চাকরি হারাতে পারে। এটি একটি সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মন্দাটি ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ বলে মনে হচ্ছে, তখন ক্রেতাদের কম ব্যয়ের কারণে ভুগতে হয়েছিল ব্র্যান্ডগুলোকে। ব্র্যান্ডগুলো সেসময় দাম কমিয়ে এবং অন্যান্য সুবিধা দিয়ে ক্রেতাদের ধরে রেখেছিল। এর ফলে সামগ্রিক চাহিদা কমে গেলেও কারখানাগুলো অর্ডার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছে।

ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন এবং অ্যাপারেল বিভাগের অধ্যাপক শেঙ লু বলছেন, সময় এখন আগের চেয়ে ভিন্ন।কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশিরভাগ জায়গায় দোকান ও মল বন্ধ রয়েছে। এটা ব্যবসায়িক লকডাউনের সময়। ব্যবসার প্রভাব অনেক বেশি হবে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপাত্ত ব্যবহার করে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও চাকরির মধ্যে যে কার্যকরণ সম্পর্ক রয়েছে সেই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে লু বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশের ক্ষেত্রে রপ্তানি ১০ ভাগ কমে গেলে ৪ থেকে ৯ ভাগ লোক চাকরি হারাতে পারে।

ম্যাককিন্সিতে পোশাক, ফ্যাশন ও বিলাসবহুল গ্রুপের গ্লোবাল নেতা আছিম বার্গ বলেছেন, এশিয়ার সব কারখানার জন্য এটি খারাপ খবর। খুচরা বিক্রেতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অনেক বড় প্রতিষ্ঠানই এখন নিজে বাঁচার চেষ্টা করছে।

মিয়ানমারের পোশাক শিল্প এসোসিয়েশনের প্রধান অং মায়ো হেইন বলেছেন, ইতোমধ্যে ১০ হাজার লোকের চাকরি চলে গেছে। তিনি নিজের কারখানার কর্মীদের আপাতত ছাঁটাই না করলেও তাদের কাজের সময় কমিয়ে এনেছেন।

চীনজুড়ে শাটডাউনের কারণে যখন অর্ডার ডাইভার্ট হচ্ছিল তখন ফেব্রুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ার ফ্যাক্টরির মালিকরা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু এখন পশ্চিমা ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করতে ইমে্ইল পাঠাচ্ছে। মালয়েশিয়ান ফ্যাশন, টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের প্রেসিডেন্ট তান থিয়ান পোহ বলেন, আমাদের মধ্যে অধিকাংশকেই ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে হবে।

হ্যানসব্র্যান্ডস ইনকরপোরেশনের ওয়ান্ডারব্রা’র জন্য পণ্য উৎপাদনকারী এক তরুণ বাংলাদেশি কারখানার মালিক রমিজ খালিদ-ইসলাম বলেন, আমি আমার শেষ অর্ডারের কাজ শেষ করছি এবং ১ এপ্রিল কারখানা পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধের পরিকল্পনা করছি। যেহেতু ইউরোপিয়ান খুচরা বিক্রেতারা তাদের অর্ডার বাতিল করেছে।

দুই সপ্তাহ আগে অন্য এক সমস্যার কারণে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাকে নিয়ে খবর প্রকাশ করে। তার কোম্পানির চাইনিজ কর্মীরা কোয়ারেন্টিনে থাকায় এবং চীন থেকে কাঁচামাল না আসায় কারখানাটি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল তাকে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের আবাসন ও চিকিৎসা সুবিধাসহ বেতনের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে তার।

খালিদ ইসলাম জানান, তিনি কয়েক মাস নিজে বেতন না নেয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি জানেন না এটা কিভাবে বহন করা হবে।

এ/পি

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আফগানিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপে শুভসূচনা বাংলাদেশের
তামিমের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, চ্যালেঞ্জিং পুঁজি বাংলাদেশের
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি, পদ ১৪
সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকরির সুযোগ