ঢাকামঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

ফাগুন রাঙা বইমেলায় প্রেমের জয়ধ্বনি

সিয়াম সারোয়ার জামিল

মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ , ০৯:১০ পিএম


loading/img

মঙ্গলবার ছিল কর্মদিবস। তবু দুপুর দুটোতে শাহবাগ চত্বর থেকে বইমেলায় যাওয়ার নাতিদীর্ঘ পথে অগণিত লোক। তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। কারো পরণে লাল, কারো পরণে হলুদ রঙা পোশাক। ভালোবাসা দিবস আর ফাল্গুনের দ্বিতীয় দিনে উৎসব-আবহে তারা বইমেলায় ঢুকছেন লম্বা সারি বেঁধে। ঘুরে বেড়িয়েছেন যুগলবন্দী হয়ে।

বিজ্ঞাপন

আগের দিন সোমবারও ছিল দারুণ সমাগম। মঙ্গলবারও যে এতটা হবে, কে কল্পনা করেছিল? কিন্তু বিকেলে বাংলা একাডেমিতে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকতে সবাইকেই হিমশিম খেতে দেখা গেছে। প্রকাশকেরা জানিয়েছেন, ভিড়ে পা ফেলায় মুশকিল। বিক্রি ছিলো বেশ।

মেলার শুরুতে প্রকাশকেরা বেশ অসন্তষ্টি দেখালেও মাঝামাঝিতে এসে বেশ তুষ্ট। শ্রাবণ প্রকাশনীর রবিন আহসান জানালেন, এবার তাঁদের বিক্রি বেশ ভালো। বিশেষ করে গেলো দুই দিন। নির্ণায়কের ফাইজুস সালেহীন বললেন, সব মিলিয়েই এবারের বিক্রি আগের যেকোনো মেলার চেয়ে ভালো। মেলায় ফাঁকা পরিসর বেশি বলে পাঠকেরা ঢুকতে পারছেন বেশি, ঘুরতে-ফিরতে পারছেন স্বস্তিতে।

বিজ্ঞাপন

শুধুই স্বস্তি? ধুলোটা কমেছে। শেষ পর্যন্ত ফোয়ারাটাও চালু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই সে ফোয়ারা ঘিরে দেখা গেলো দারুণ ভিড়। কথা হলো তাদের কয়েকজনের সঙ্গে।

'দুপুরে ক্যাম্পাস ঘুরেছি। বিকেলে বইমেলা ঘুরেছি দুজন মিলে। বেশ ভাল লেগেছে।' বলছিলেন যাত্রাবাড়ির মণিকা বিশ্বাস। তিনি এসেছেন স্বামী দুরুল হকের সঙ্গে। মণিকা নিজে কিনেছেন বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সংকলন ওঙ্কারসমগ্র। আর দুরুল কিনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচিত প্রবন্ধ। 

বিজ্ঞাপন

সানজানা হক এসেছিলেন বন্ধু বাবু আহমেদ ও রাশেদ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বললেন, 'পাঁচটি উপন্যাসের বই কিনেছি। মেলার পরিসর বেশ ভাল। প্রচুর ভিড়। লাইন ধরে ঢুকতে হয়েছে।' 

বিজ্ঞাপন

এদিকে, মেলায় মঙ্গলবার নতুন বই এসেছে ১৪৬টি। এর মধ্যে ২৩টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। গ্রন্থমেলা শুরু হবার পর থেকে সোমবার পর্যন্ত (১-১৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমির বিক্রয় কেন্দ্রসমূহে মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০,০০,০৯০.০০ টাকা। বিকেল চারটায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'পঞ্চাশ ও ষাট দশকের একুশের সংকলন' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক ড. ইসরাইল খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন ও সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত। সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী।

প্রাবন্ধিক বলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুধু রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার প্রতিষ্ঠাই নিশ্চিত করেনি একই সঙ্গে সাহিত্য-সংস্কৃতিমনা তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে গেছে অসামান্য উত্তাপ। এই উত্তাপেরই ফল হিসেবে গেলো শতেকর পঞ্চাশ ও ষাট দশকে অজস্র আগুনের ফুলের মতো অসংখ্য একুশের সংকলন প্রকাশিত হতে দেখি। বলাই বাহুল্য, এসব সংকলন কেবল ভাষা আন্দোলন, ভাষাশহীদ এবং অমর একুশের চেতনাকেই ধারণ করেনি, একই সঙ্গে স্বাধীনতামুখি সংগ্রামের বীজও বপন করে গেছে। 

আলোচকবৃন্দ বলেন, বাংলা একাডেমি কয়েক দশক আগে একুশের সংকলনের তালিকাভিত্তিক যে গ্রন্থ প্রকাশ করেছিল তা হালনাগাদ করে নতুনভাবে প্রকাশিত হলে প্রায় সাত দশকে একুশ কী করে বাঙালি জাতিকে সঞ্জীবিত করেছে তার দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যাবে। 

সভাপতির বক্তব্যে কামাল লোহানী বলেন, একুশের চেতনা যেমন একুশের সংকলনের মধ্যে প্রকাশিত তেমনি প্রভাতফেরির মাঝেও মূর্ত হয় কিন্তু দুঃখজনক বিষয় সাম্প্রতিক সময়ে একুশের সংকলন প্রকাশে তরুণদের যেমন উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না তেমনি প্রভাতফেরির রেওয়াজও দুর্লভ হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে সর্বস্তরের বাংলা ভাষা প্রচলন ও ব্যবহারের রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায় সীমাহীন অবহেলা। 

তিনি বলেন, ভাষাশহিদের স্মৃতি অমর করে রাখতে হলে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।  

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ এবং তনুশা রহমান। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী খুরশিদ আলম, তপন চৌধুরী, জয় শাহরিয়ার, আফসানা রুনা, অঞ্জলি রায় চৌধুরী এবং আল বেরুনী অণু। 

এসজে/

 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |