ইরানের বিচার বিভাগের প্রধানের ‘উপদেশ’ মেনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জাভেদ জারিফ। পদত্যাগপত্রে গত ছয় মাসকে নিজের ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ‘সবচেয়ে তিক্ত’ সময় বলে উল্লেখ করেছেন জারিফ। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিরোধীরা তার সমালোচনা করে আসছিলেন।
সোমবার (৩ মার্চ) তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিজের পদত্যাগপত্র পোস্ট করে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলে জানিয়েছে তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।
পদত্যাগপত্রে গত ৯ মাস প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে নিবেদিতভাবে কাজ করার কথা উল্লেখ করে জারিফ লেখেন, ছয় মাস ধরে তাকে ও তার পরিবারকে জঘন্য অপমান, অপবাদ এবং হুমকি সহ্য করতে হয়েছে।
তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জারিফের সমালোচকদের অনেকের অভিযোগ, তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। কারণ, তার সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে। তারা জন্মসূত্রে ওই দেশের নাগরিক।
জারিফ পেজেশকিয়ানের মন্ত্রিসভা ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন। রক্ষণশীল রাজনীতিবিদেরা তাকে অপসারণ করতে চাইছিলেন। তাকে অপসারণ করতে তারা সম্প্রতি পার্লামেন্টের প্রতি আহ্বান জানান। এর পর থেকেই জারিফের পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্যি নয় বলে সব সময় উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
এর আগে, জারিফকে নিজের সরকারে কৌশলগতবিষয়ক পরামর্শদাতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। নির্বাচনী প্রচারে পেজেশকিয়ানের পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন জারিফ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জারিফ ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির আমলে আট বছর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালে পশ্চিমাদের সঙ্গে করা ইরানের পরমাণু চুক্তিতে তিনি মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন।
পদত্যাগপত্রে জারিফ লেখেন, জাতীয় স্বার্থ এগিয়ে নিতে ছোটখাটো ভূমিকা রাখায় গত চার দশকে আমি অসংখ্য অপমান ও অভিযোগ সহ্য করেছি। আমার ছোটখাটো অবদানের মধ্যে আরোপিত যুদ্ধের অবসান থেকে শুরু করে সফল পরমাণু চুক্তির কথা উল্লেখ করা যায়। বিরামহীন মিথ্যা ও বক্তব্য বিকৃতির মুখেও দেশের স্বার্থে আমি এত দিন চুপ ছিলাম।
তিনি জানান, বিচার বিভাগীয় প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই তাকে পদত্যাগ করতে ‘উপদেশ’ দিয়েছেন। দেশের চলমান টালমাটাল পরিস্থিতিতে সরকারের ওপর আরও চার তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যাওয়ার উপদেশ দেন তিনি।
ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাভেদ জারিফ লেখেন, আশা করছি, আমার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের ইচ্ছা ও সরকারের সফলতার পথে বাধা দূর হবে।
এদিকে, জারিফের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রেসিডেন্টের দপ্তর তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের ওপর চাপ কমাতে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে।
আরটিভি/কেএইচ