ফিলিস্তিনের স্বাধীনতায় সংহতি জানিয়ে আসা হুতি বিদ্রোহীদের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ঘোষণার পরপরই মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেনে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হুতি যোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ্য করে চালানো হামলায় এ হামলায় কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও অনেকে।
রোববার (১৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইয়েমেনের হুতিদের ওপর বিমান হামলা শুরু করেছে আমেরিকা। এই হামলায় কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, লোহিত সাগরের জাহাজগুলোতে হামলার ঘটনা ঘটলে ‘নরক নেমে আসবে’।
মূলত, গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণ অবরোধ জারি করেছে ইসরায়েল। ফলে সেখানে কোনো ধরনের খাদ্যদ্রব্য, পানি বা ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় লোহিত সাগরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে পুনরায় আক্রমণ শুরু করার হুমকি দেয় হুতি বিদ্রোহীরা। এই হুমকির পরপরই ইয়েমেনে হুতিদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র। গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি অবরোধ তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করেছে।
এদিকে হুতিদের মুখপাত্র মোহাম্মদ আব্দুল-সালাম এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলেছিলেন, জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলের হুমকির বিষয়টি অতিরঞ্জিত করছে।
সংগঠনের রাজনৈতিক ব্যুরোর পক্ষ থেকেও একটি পৃথক বিবৃতি জারি করা হয়েছে। এ বিবৃতিতে রাজধানী সানার ওপর বিশ্বাসঘাতক মার্কিন আগ্রাসনের নিন্দা করা হয়েছে এবং আবাসিক এলাকা ও বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ইয়েমেনের সংহতির অবস্থানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে মার্কিন এই আগ্রাসন ফিলিস্তিনের প্রতি ইয়েমেনের সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং গাজার প্রতি তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ থেকে বিরত রাখতে পারবে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, এই আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে এবং ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী এই হামলা প্রতিহতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, মার্কিন হামলার পর ইয়েমেনে প্রাণহানির সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৯ বলে জানানো হয়েছিল। তবে হুথিদের সহযোগী আল মাসিরাহ টিভি জানিয়েছে, ইয়েমেনের সাদায় মার্কিন হামলায় নিহতের সংখ্যা ছয় থেকে বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে চার শিশু এবং একজন নারী রয়েছেন। চ্যানেলটি আরও জানিয়েছে, হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া রাজধানী সানায় আরও ১৩ জন নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, মার্কিন হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ইয়েমেনের আল মাসিরাহ টিভি দেশটির রাজধানী সানা এবং সাদা শহরে নতুন করে ইসরায়েলি হামলার খবর দিয়েছে।
হুথিদের সহযোগী এই চ্যানেলটি জানিয়েছে, সাদায় হামলায় সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যার ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
শনিবার (১৫ মার্চ) শুরু হওয়া এই হামলা ও তার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পাল্টা হামলা কয়েক দিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহও চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরটিভি/এসএইচএম/এস