সুস্থ থাকতে যেমন প্রয়োজন ভিটামিন, মিনারেল। ঠিক তেমনি ওজন নিয়ন্ত্রণেও জানতে হবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের প্রয়োজনীয় নিয়ম কানুন। শরীরকে সুস্থ রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। সারাদিনের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে হবে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেল ও পানির সুষম বণ্টন। এছাড়া তিনবেলা খাবারের পরিবর্তন করে ৫ থেকে ৬ বেলার খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
শরীর সুস্থ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন নিউট্রিশন বিশেষজ্ঞ ডা. মৌসুমী আফরিন ইভা।
১. অনেকেই মনে করেন চর্বিযুক্ত খাবার ওজন বৃদ্ধি করে। এ ধারণাটি সঠিক নয়। চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাবার অবশ্যই খেতে হবে। কারণ ফ্যাটযুক্ত খাবার শরীরের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। কিন্তু কোন ফ্যাট প্রয়োজনীয় এবং কোনটি অপ্রয়োজনীয় সেটি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
২. অনেকেই সুস্থ থাকতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে ইউটিউব দেখে ধারণা নেয়। কিন্তু শরীরের জন্য কোন খাবারটি প্রয়োজন এবং কোনো খাবারটি বাদ দিতে হবে তার জন্য একজন নিউট্রিশন কনসালটেন্ট বা অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।
৩. মিষ্টি জাতীয় খাবার একজন ডায়াবেটিক রোগী সব সময়ই এড়িয়ে চলেন। কারণ এই খাবার রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়ায়। কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে যার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি। যা খেতে মিষ্টি নয় কিন্তু তা মিষ্টি জাতীয় খাবারের মতো রক্তের গ্লুকোজ বাড়াতে বিশেষভাবে দায়ী। এক্ষেত্রে এসব খাবারগুলোও পরিহার করতে হবে।
৪. রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি হলে খাবার নিয়ে সতর্ক হতে হবে। এছাড়া গাউট রোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য এমন কিছু খাবার নিষিদ্ধ আছে, যা খাওয়ার কারণে শরীরের ব্যথা অজান্তেই বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের অতিরিক্ত পানি নয়, বরং পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে। পিউরিন ও পটাশিয়াম বেশি এমন শাকসবজি ও ফলমূলকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, মিষ্টি পেঁপেসহ অন্যান্য খাবার দিয়ে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।
৫. কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীরা প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খান। তবে কিছু রোগী এমনভাবে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বন্ধ করে ফেলেন যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এজন্য শরীরের ঘাটতি অনুযায়ী পরিমিত প্রোটিন খাবার তালিকায় রাখতে হবে। প্রতিদিন মাছ, মাংস, ডিম (প্রতি ওজনের জন্য ০.৫–০.৮ গ্রাম আমিষ) খেতে হবে। সেই সঙ্গে লবণ বা সোডিয়াম খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৬. উচ্চরক্তচাপের রোগীরা কাঁচা লবণ কম খেলেও প্রতিদিন আচার, চানাচুর, চিপস, মুড়ি, সস বা সয়াসসের রান্না করা খাবার খেয়ে যাচ্ছেন। ফলে লবণের মাত্রা কমার পরিবর্তে বাড়ছে।
৭. যারা হাইপো থাইরয়েড এর রোগী, তাদেরকে ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ কেক, পাউরুটি, ওটস, পেস্ট্রি ইত্যাদি খাবারগুলো পরিহার করে লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি খাবার খেতে হবে।
৮. যারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত, যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা অনেক বেশি তাদের ক্ষেত্রেও প্রাণীজ চর্বি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত পোড়া, ডুবো তেলে ভাজা (ট্রান্সফ্যাট) জাতীয় খাবার প্রতিদিনের খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। সেই সঙ্গে যুক্ত করতে হবে মৌসুমি ফলমূলও সবুজ–শাক সবজি।
৯. গর্ভবতী মহিলাদের বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় কামরাঙা, আনারস, পেঁপে না খাওয়াই ভালো। এ সময় আমিষ সমৃদ্ধ খাবার মাছ, মাংস, দুধ খেতে হবে। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত শাক–সবজিও ফল খেতে হবে।
১০. ওজন কমানোর জন্য ক্রাশ ডায়েট, ওয়াটার ফাস্টিং, কিটো ডায়েট, ইন্টারমিটেন্ট ডায়েট জাতীয় অস্বাস্থ্যকর ডায়েটের প্রতি না ঝুঁকে কায়িক পরিশ্রম বাড়ান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
১১. রাত ১১টার মধ্যে সকল ডিভাইস বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ুন, আবার ঘুম থেকে ভোরে উঠে পড়ুন। সম্ভব হলে দুপুরের ঘুমকে না বলুন।
১২. ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, প্রোসেস ফুড, আইসক্রিম, পেস্ট্রি, চকলেট জাতীয় খাবারকে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন।
১৩. দিনে কম পক্ষে ১০ থেকে ১২ গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করুন। এর সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। তবে এসিডিটির সমস্যা থাকলে তা পরিহার করুন। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই লেবুর রস শরীরের ফ্যাট কাটাতে সাহায্য করে।
১৪. যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন, তারা কিছুক্ষণ পর পর একটু হাঁটাচলা করুন। ধুমপান–মদ্যপান পরিহার করুন।
ডা. মৌসুমী আফরিন ইভা
নিউট্রিশন কনসালটেন্ট, ডায়াবেটলজিষ্ট ও ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান।
মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস, মালিবাগ ঢাকা।
সিনিয়র রেসিডেন্ট (ইন্টারনাল মেডিসিন)
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হসপিটাল।