পবিত্র রমজান মুসলমানদের জন্য আশির্বাদস্বরুপ। স্বাস্থ্যের জন্য বছরে একমাস রোজা রাখাও ভালো। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও গরমে রোজা পড়েছে। তাই গরমে পানিশূন্যতা ও অন্যান্য জটিলতা না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি ও ক্রনিক রোগে আক্রান্ত, বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বারা বেশি সতর্ক থাকবেন।
উচ্চ-রক্তচাপ ও হৃদরোগ
যাদের উচ্চ-রক্তচাপ আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ বা নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। মাঝেমধ্যে রক্তচাপ মেপে দেখুন। ওলট-পালট হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ডাইইউরেটিকস–জাতীয় ওষুধ যারা সেবন করেন, তাদের পানিশূন্যতা হতে পারে বেশি।
ইফতারে অতিরিক্ত লবণ দেওয়া খাবার, সয়া সস, টেস্টিং সল্ট দিয়ে তৈরি খাবার, মেরিনেটেড কিংবা প্রক্রিয়াজাত খাবার রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। ছোলা, ফলমূল বা সালাদের সঙ্গেও কাঁচা লবণ পরিহার করুন। ভাজাপোড়া তৈলাক্ত খাবার রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়াবে। তাই ইফতারে এসব এড়িয়ে, তাজা ফলমূল খেতে চেষ্টা করুন।
কিডনি রোগ
কিডনি রোগীরা রোজা থাকতে চাইলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, পানিশূন্যতা হলে তাদের ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যায়। সাধারণত তাদের সারা দিনে পানির পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। অনেকেই শরীরের পানি কমানোর ওষুধ সেবন করে, যা রোজায় শরীরকে আরও পানিশূন্য করে দিতে পারে।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস রোগীরা রমজানের আগে নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। ইনসুলিন ও ওষুধের নতুন সময়সূচি এবং মাত্রা জেনে নিন। রোজা রেখে গ্লুকোমিটারে রক্তের শর্করা পরীক্ষা করলে রোজা ভাঙে না, এটা আলেম-ওলামাদেরই বক্তব্য। তাই রোজায় প্রয়োজনে, রক্তের শর্করা পরীক্ষা করবেন। শর্করা ৪–এর নিচে বা ১৬ দশমিক ৬–এর ওপর গেলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে।
এ ছাড়া দিনের যেকোনো সময় বুক ধড়ফড়, ঘাম, অস্থিরতা, কাঁপুনি, মাথা ঘোরা, ঝাপসা দেখার মতো উপসর্গ দেখা দিলে, রোজা ভাঙতে হবে। এগুলো রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার লক্ষণ। ডায়াবেটিস রোগীরা চিনিযুক্ত পানীয় খেতে পারবেন না। তবে জটিল শর্করা খেতে হবে, বিশেষ করে সেহরির সময়। আর অবশ্যই তাদের সেহরি খেতে হবে।
হাঁপানি
ইনসুলিন বা গ্লুকোমিটার ব্যবহারের মতো হাঁপানির রোগীরাও ইনহেলার বা নেবুলাইজার ব্যবহার করলে রোজা ভাঙে না, আলেমরা এই মতামত দিয়েছেন। তাই যাদের ইনহেলার দরকার হয়, তারা এটি চালিয়ে যাবেন। শ্বাসকষ্ট বেশি বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে রোজা ভাঙতে হতে পারে। কারণ, প্রচুর পানি ও স্যালাইন খেয়ে তখন পানিশূন্যতা রোধ করতে হয়। সবচেয়ে ভালো হলো ডায়রিয়া যাতে না হয়, সে জন্য বাসি-পচা খাবার, রেস্তোরাঁর খাবার, ফুটপাতের খাবার এড়িয়ে চলা। বিশুদ্ধ পানি পান করা।
রোজায় হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। যেমন বমি, ডায়রিয়া, জ্বর, সংক্রমণ হতেই পারে। অসুস্থ হলে রোজা ভাঙতে হবে। ইসলাম এ বিষয়ে ছাড় দিয়েছে। এই ভাঙা রোজা পরে পূরণ করা যায়। তাই সম্পূর্ণ সুস্থ না হয়ে ওঠা পর্যন্ত রোজায় বিরতি নিন।