অটিজম হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। যেখানে শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ, কল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহে বেশ সমস্যা লক্ষ করা যায়। বিশেষজ্ঞরা একে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (এএসডি) বলেন।
অটিজমে আক্রান্ত রোগীর পক্ষে শব্দ, অঙ্গভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি এবং স্পর্শের মাধ্যমে নিজের ভাব প্রকাশ করা কঠিন। পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন জিনিস শেখার ক্ষেত্রেও হয় সমস্যা। কখনও আক্রান্তের দক্ষতা অসম ভাবে বিকশিত হয়। যেমন— কথোপকথনে সমস্যা হলেও সংগীত, গণিত, স্মৃতি বা কোনো নির্দিষ্ট শিল্পে রোগী অস্বাভাবিক রকম ভালো হতে পারে।
অটিজম রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো—
শিশুদের বৃদ্ধির একাধিক স্তর থাকে। দৈহিক বৃদ্ধির সঙ্গে সামাজিক বৃদ্ধিও একটি স্তর। এ সময় শিশু মাকে দেখে হাসে, কোনো কিছুর দিকে আকার ইঙ্গিতে নির্দেশ করে কিংবা শিশুর শব্দস্ফুরণ হয়।
সমাজে চলতে শেখার শুরুর প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়াও অটিজমের লক্ষণ। কারও সঙ্গে মেলামেশা না করা, অনেক খেলনার মাঝে কেবল একটি খেলনা নিয়ে খেলা, নতুন কিছুতে আগ্রহ না দেখানো, নাম ধরে ডাকলে সারা না দেওয়া বা একটানা আপন মনে থাকার মতো লক্ষণ এ রোগের প্রাথমিক উপসর্গ।
সদ্যজাত অবস্থা থেকেই এই সমস্যা শুরু হতে পারে। তবে মূলত স্কুলে যাওয়ার বয়সের আগেই উপসর্গগুলো পরীক্ষা করা দরকার। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস ১৬ থেকে ২৪ মাস বয়সি শিশুদের বিশেষভাবে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছে। এই পরীক্ষা প্রাথমিকভাবে বাড়িতে মা-বাবাই করতে পারেন।
বয়স অনুযায়ী শিশুর ব্যবহারে কোনো অসামঞ্জস্য দেখলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক শিশুদেরও বৃদ্ধি দেরিতে হতে পারে, তাই অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ, ‘পোলিও টিকার সঙ্গে যে কার্ড দেওয়া হয় সেটি দেখা। এ কার্ডে বয়স অনুসারে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও প্রবৃত্তির লক্ষণ লেখা থাকে। এই ধাপগুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন। কোনো সমস্যা চোখে পড়লে, অবিলম্বে যোগাযোগ করতে হবে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে।
যাদের ঝুঁকি বেশি
পরিসংখ্যানগত ভাবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে অটিজম চারগুণ বেশি। যেকোনো জাতিগোষ্ঠী বা সামাজিক পটভূমির মানুষের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে। জীবনধারার সঙ্গে এর বিশেষ কোনো যোগসূত্র নেই। তবে পরিবারে এই রোগের ইতিহাস থাকলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এ ছাড়া বেশি বয়সে সন্তান নিলে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অ্যালকোহল বা অ্যান্টি-সিজার জাতীয় ওষুধ খেলে অটিজম শিশু জন্মানোর ঝুঁকি থাকে। কিছু গবেষণায় ডায়াবেটিস, স্থূলতা, ফিনাইলকিটোনুরিয়া এবং রুবেলা এই রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে দাবি করা হলেও, এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
চিকিৎসা
রোগীভেদে প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়াও আচরণ ও যোগাযোগ ভিত্তিক বিভিন্ন থেরাপি, ইন্টিগ্রেশন থেরাপি, দৃশ্য-শ্রব্য মাধ্যমের ব্যবহার ও সৃজনশীল নানা অভ্যাসের অনুশীলনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় অটিজম ধরা পড়লে আক্রান্ত শিশুর বিকাশ সহজতর হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখলেই চিকিৎসককে শরণাপন্ন হতে হবে।
সূত্র : আনন্দবাজার।