মুখের ত্বকে ভুলেও ব্যবহার করবেন না এই উপকরণগুলো
ত্বকের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চাইলে নিয়মিত সঠিকভাবে ত্বকের পরিচর্যা প্রয়োজন। তার জন্য প্রতিদিন ত্বকের যত্ন করা জরুরি সঠিক পদ্ধতিতে। আমরা নিজেদের অজান্তেই বেশ কিছু ভুল করে ফেলি ত্বকের পরিচর্যার ক্ষেত্রে। আর সেই কারণে দেখা দিতে পারে ত্বকের একাধিক জটিল সমস্যা। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ফেসিয়াল বিউটি প্রোডাক্টের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হয় ও কিছু পণ্য ব্যবহার এড়িয়ে যেতে হয়। কারণ বিউটি পণ্যে ব্যবহৃত উপাদানসমূহের মাঝে কিছু উপাদান ত্বকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। ত্বককে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টায় জেনে রাখুন মুখের ত্বকে কী উপাদান ও কোন ধরনের পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকা জরুরি।
জেনে নিন উপকরণগুলোর নাম—
১। এক্সপায়ার হয়ে যাওয়া কোনও বিউটি প্রোডাক্টই ব্যবহার করা উচিত নয়। এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত ক্রিম, ময়শ্চারাইজার, সানস্ক্রিন এইসবের ব্যাপারে। এক্সপায়ার হওয়া প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে আপনার ত্বকে র্যাশ, অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।
২। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবুর রস ট্যান তুলতে খুব ভালোভাবে কাজে লাগে। কিন্তু সরাসরি কখনও ত্বকে লেবুর রস ব্যবহার করবেন না। সাইট্রিক অ্যাসিডের জেরে ত্বক পুড়ে কালো দাগ হয়ে যেতে পারে। তবে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে ফেসপ্যাক কিংবা স্ক্রাব তৈরি করলে সেখানে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
৩। অনেক সময় তাড়াহুড়োয় অনেকে মুখেও শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নেন। অথবা সাবান শেষ হয়ে গেলে ভাবেন একদিন শ্যাম্পু দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে কীই বা আর ক্ষতি হবে। এই কাজ একেবারেই করবেন না। ত্বক মারাত্মক রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
৪। নারকেল তেল চুলের পাশাপাশি ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রেও জরুরি একটি উপকরণ। কিন্তু তাই বলে সরাসরি মুখে নারকেল তেল একেবারেই ব্যবহার করবেন না। এর জেরে ত্বকের পোরসের মুখগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ত্বকে নোংরা জমে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে ব্রণের সমস্যা।
৫। চুল পরিষ্কার করার সময় শ্যাম্পু মুখের ত্বকে মিশে যায় বেশিরভাগ সময়। কিন্তু এই ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকা খুবই প্রয়োজন। আমাদের মুখের ত্বক এবং চুল ও চুলের ত্বকের মলিকিউলস সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়। চুলের ত্বক তুলনামূলক পুরু হওয়ার দরুন ক্লিনজার হিসেবে স্ট্রং উপাদান ব্যবহার করা হয় শ্যাম্পুতে। যা আমাদের মুখের ত্বকের সাথে একেবারেই মানানসই নয়। এ কারণেই চুল শ্যাম্পু দ্বারা পরিষ্কার করার পর আমাদের ত্বক খসখসে ও রুক্ষ হয়ে ওঠে। কারণ আমরা এর প্রতি একেবারেই নজর দেই না।
৬। শীতকালীন সময়ে ত্বক ফাটাভাব রোধ করতে অনেকেই মুখের ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে। পেট্রোলিয়াম জেলি মূলত ত্বকের উপরের অংশে পর্দার মতো একটি আবরণ তৈরি করে। এতে করে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় এবং সহজেই ত্বকে ব্রণের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পেট্রোলিয়াম জেলি ঠোঁটের ত্বকের জন্য উপযুক্ত হলেও মুখের ত্বকের জন্য কোনভাবেই উপকারী বা উপযুক্ত নয়। মুখের ত্বকের রুক্ষতা দূর করার জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা সঠিক।
৭। ইদানিংকালে ব্রণের সমস্যা দূর করতে একটি প্রচলিত টিপস দেখা যায়। মুখের ত্বকের কোন স্থানে ব্রণ হলে তার ওপরে টুথপেস্টের প্রলেপ মাখিয়ে রেখে দেওয়া। যেহেতু টুথপেস্ট অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, তাই ত্বকের লালচে ভাব কমাতে টুথপেস্ট কার্যকরি হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে ত্বকে জ্বলুনি দেখা দিতে পারে। এছাড়া একেকজনের ত্বক একেক ধরনের হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে অনেকের ত্বকে টুথপেস্ট ব্যবহারে সমস্যা না হলেও হুট করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যায়।
৮। বর্তমান স্কিন কেয়ার পণ্যের মাঝে অ্যাস্ট্রিজেন্টস ও টোনার সবসময়ই উপস্থিত থাকে। অথচ এই ধরনের পণ্যগুলোই পরবর্তীতে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করে। কারণ এ সকল পণ্যে বেশ উচ্চমাত্রায় অ্যালোকোহল ও এ জাতীয় উপাদান উপস্থিত থাকে। যা ধীরে ত্বকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। তাই এই জাতীয় পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থেকে হালকা বা লাইটওয়েট ময়েশ্চারাইজার ও ক্লিনজিং পণ্য ব্যবহার করতে হবে।
এবার দেখে নেওয়া যাক ত্বকের পরিচর্যা করার সময় কোন কোন বিষয় মাথায় রাখবেন:
১। কখনই মুখে ফেসপ্যাক কিংবা স্ক্রাব লাগানোর সময় জোরে জোরে ঘষবেন না। এর জেরে ত্বকের গঠন নষ্ট হতে পারে। আলতো হাতে ত্বকে যেকোনও উপকরণ ম্যাসাজ করা প্রয়োজন।
২। অনেকের ক্ষেত্রে মুখের ত্বকে চুলের আধিক্য দেখা যায়। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই ওয়াক্সিং করতে যাবেন না নিজে নিজে। বিউটি পার্লারে গিয়ে অভিজ্ঞ লোকের সাহায্যে সমস্যার সমাধান করা জরুরি। নাহলে বিপদ হতে পারে।
৩। মুখ পরিষ্কারের পর কখনই খুব জোরে ঘষে মুখে লেগে থাকা পানি মুছতে যাবেন না। ব্যবহার করুন নরম তোয়ালে বা সুতির গামছা। আলতো হাতে মুছে নিন পানি।
মন্তব্য করুন