মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও অনেক সময় আমরা এটি অবহেলা করি। শারীরিক অসুস্থতার মতো মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাও ধীরে ধীরে গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। তবে কিছু প্রাথমিক লক্ষণ আগে থেকে চিহ্নিত করতে পারলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। নিচে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে দেখা দিতে পারে এমন কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো।
মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির লক্ষণ—
অস্থিরতা
হঠাৎ করে মেজাজ পরিবর্তন হওয়া, খুব বেশি খুশি বা খুব বেশি দুঃখ অনুভব করা মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যদি কেউ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে, তবে এটি বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ বা হতাশা
দীর্ঘ সময় ধরে বিষণ্ন অনুভব করা, দৈনন্দিন জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, সবকিছুতেই নেতিবাচকতা দেখা—এগুলো ডিপ্রেশনের লক্ষণ হতে পারে।
অতিরিক্ত উদ্বেগ ও শঙ্কা
অযৌক্তিক ভয় বা দুশ্চিন্তা অনুভব করা, ছোটখাটো বিষয়েও অতিরিক্ত চিন্তা করা এবং উদ্বেগের কারণে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির ইঙ্গিত দেয়।
সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নতা
পরিবার, বন্ধু বা প্রিয়জনদের থেকে হঠাৎ করে দূরে সরে যাওয়া, যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়া, কিংবা আগের পছন্দের কাজেও অনাগ্রহ প্রকাশ করা মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
মনোযোগের অভাব
কাজে বা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে সমস্যা হওয়া, সহজেই ভুলে যাওয়া বা চিন্তার সঠিক প্রবাহ ধরে রাখতে না পারা—এসব মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির লক্ষণ হতে পারে।
দৈনন্দিন চাপে মানিয়ে নিতে অসুবিধা
নিয়মিত চাপ বা সাধারণ সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে না পারা, অল্পতেই হতাশ বোধ করা, কিংবা কাজের চাপ সামলাতে হিমশিম খাওয়া মানসিক অবসাদের লক্ষণ হতে পারে।
অস্বাভাবিক চিন্তাধারা
বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন বিশ্বাস বা চিন্তাভাবনা, নিজের সম্পর্কে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা নিজেকে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মনে করা—এগুলো মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
অতিরিক্ত রাগ বা আক্রমণাত্মক আচরণ
অল্পতেই রেগে যাওয়া, নিয়ন্ত্রণহীন রাগ প্রকাশ করা কিংবা আক্রমণাত্মক আচরণ করা মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির লক্ষণ হতে পারে।
ক্লান্তি ও শক্তির অভাব
নিয়মিত ক্লান্ত অনুভব করা, সবসময় শক্তিহীন মনে হওয়া এবং কোনো কাজে আগ্রহ না পাওয়া মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
ঘুমের সমস্যা
অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর প্রবণতা মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি বোঝাতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের সমস্যা দেহ ও মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
অতিরিক্ত খাওয়া বা ক্ষুধামন্দা দেখা দিলে এটি মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এই পরিবর্তন শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
আত্মঘাতী চিন্তা
যদি কেউ আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে বা এমন ইঙ্গিত দেয়, তবে এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় এবং দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
করণীয়
উল্লেখিত লক্ষণগুলোর মধ্যে একাধিক লক্ষণ যদি কারও মধ্যে দেখা যায় এবং তা তার দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে যত দ্রুত সম্ভব একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা গেলে মানসিক সমস্যার চিকিৎসা সহজ হয় এবং সুস্থতার পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
আরটিভি/জেএম