লকডাউনে হাতে সারাক্ষণ মোবাইলফোন? দুঃসংবাদ আছে!
বর্তমান সময় একটা কথা বেশ শোনা যায়, এক-দুদিন না খেয়েও থাকা যাবে কিন্তু মোবাইলফোন ছাড়া থাকা যাবে না। বাস্তবেও অনেকে ক্ষেত্রে তা দেখা যায়। সারাক্ষণ মোবাইলে ঘাটাঘাটি করতে দেখে অনেক গুরুজন বকাবকি করে। কিন্তু এখন বকাবকিটা কেউ করছেন না কারণ সবাই লকডাউনে। বিশেষ করে এই লকডাউনের দিনগুলোতে দিনভর হাতে মোবাইল, চোখ স্ক্রিনে। কিন্তু দুঃখের খবর হলো, মাত্রাতিরিক্ত মোবাইলফোনের ব্যবহার থেকে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি।
দিনভর মোবাইলফোন হাতে লকডাউন কাটালে যে কী মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে ভারতের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন ভুল ভঙ্গিমায় একটানা মোবাইল ব্যবহার করার ফলে পেশীতে টান পড়ে, আবার রক্তচলাচলের গতিও কমে যায়। এরই ফলস্বরূপ শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা-বেদনার সূত্রপাত। এর সঙ্গে হাটবাজার বা অন্য কারণে সঙ্গে মোবাইল নিয়ে বাড়ির বাইরে গেলে তা থেকে সার্স কোভ-২ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। আবার কাজ করতে করতে কাঁধে মোবাইল রেখে, ঘাড় করে কাত করে কথা বললেও ঘাড়ে ব্যথা হয়।
চলুন জেনে নিই অতিরিক্ত সময় মোবাইলফোন ব্যবহারে কী কী সমস্যা দেখা যেতে পারে
- কম আলোয় মোবাইলে চোখ ডেকে আনে চোখের সমস্যাও।
- নাগাড়ে মোবাইলে কথা বললে ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যথার ঝুঁকি বাড়ে।
- মাইগ্রেন ও মাথা ব্যথার শঙ্কা থাকে।
- অনবরত মোবাইলে মেসেজ বা সোশ্যাল সাইটে লেখালেখি করলেও হাতের কবজি ও আঙুলে ব্যথা হতে পারে।
- ব্রিটেনের হ্যান্ড ও এলবো সার্জন রজার পাওয়েল ও তাঁর সহযোগীদের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, যারা দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মোবাইলে টেক্সট করেন তাঁদের ‘টেক্সট ক্ল’ (Text Claw) এবং ‘সেল ফোন এলবো’ নামে আঙুল ও কব্জির সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যার নাম ‘কিউবিটাল টানেল সিনড্রোম’।
- অনবরত টেক্সট লেখার জন্য হাতের বুড়ো আঙুল, তর্জনী এবং মধ্যমা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার হয় বলে এই আঙুল দুটির কাছাকাছি থাকা স্নায়ুর উপর বাড়তি চাপ পড়ে। এর ফলে শুরুর দিকে আঙুল অসাড় লাগে, পরের দিকে ব্যথা হয়।
- অনেকে কনুইয়ে ভর দিয়ে মোবাইলে টেক্সট করেন বা কথা বলেন। অতিরিক্ত সময় ধরে এমন করলে হাত, কাঁধ, ঘাড় ব্যথার ঝুঁকি বাড়ে।
- রাতের অন্ধকারে মোবাইলের নীল আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে ইনসমনিয়া অর্থাৎ অনিদ্রার ঝুঁকি বাড়ে। একই সঙ্গে ‘সিভিএস’ অর্থাৎ ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’ অর্থাৎ চোখের জল শুকিয়ে গিয়ে বারে চোখের সংক্রমণ হয়, চোখ কড়কড় করে।
- ‘কিউবিটাল টানেল সিনড্রোম’ হলে হাতের যন্ত্রণা প্রচণ্ড ভোগায়। এ ক্ষেত্রে এলবো প্যাড ব্যবহার করার পাশাপাশি কনুইয়ে চাপ দেওয়া কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করায় হাড়ের আলনা নার্ভ অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হলে সার্জারি করা ছাড়া উপায় থাকে না।
- শুধু স্নায়ুরোগই নয়, একটানা ব্যবহারের ফলে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিও কম নয়।
এই সব সমস্যা প্রতিরোধে যা করবেন-
- যতটা সম্ভব ফোন স্পিকারে দিয়ে কথা বলুন।
- সব আঙুল পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করুন।
- টানা ব্যবহারের ফাঁকে হাত ও আঙুল স্ট্রেচিং করে নেওয়ার মতো অভ্যাস বজায় রাখুন।
- শিশুর হাতে বেশি সময়ের জন্য মোবাইল দেবেন না।
জিএ
মন্তব্য করুন