নিকোটিন করোনা প্রতিরোধে কতটা কার্যকরী?
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী কোভিড-19 করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। এই ভাইরাসের ভায়াল থাবা থেকে মানবজাতিকে রক্ষায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত সামজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তারা।
ধূমপায়ীরা নভেল করোনাভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয় না। নিকোটিন তাদের ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। তবে অন্য একটি গবেষণা বলছে ঠিক এর বিপরীত কথা।
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে ধূমপায়ীরা বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে রয়েছেন বলে সাধারণভাবে ধারণা করা হতো। চাইনিজ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষকরা জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের করোনা সংক্রমণে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।
অন্যদিকে, পাস্তুর ইনস্টিটিউটের ফরাসি স্নায়ুতত্ত্ববিদ জ্যঁ পিয়েরে শনগ্য-এর নেতৃত্বে একটি গবেষণা দলের মতে, নিকোটিন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। একটি বিজ্ঞান বিষয়ক পোর্টালে তারা এ সংক্রান্ত একটি ‘হাইপোথিসিস' প্রকাশ করেছেন। গবেষণা দলটি চীনা ঐ গবেষণার বিরোধিতা এজন্য করছে যে, তাদের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, করোনা রোগীদের মধ্যে ধূমপায়ীদের সংখ্যা খুবই কম।
তারা পাঁচশ' করোনা রোগীর উপর গবেষণা করেছেন, যাদের মধ্যে সাড়ে তিনশ’ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং দেড়শ’ জন সামান্য উপসর্গ নিয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ ভাগ ধূমপায়ী।
এর আগে ইটালির ভেরোনায় গবেষকরা ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ইন্টারনাল মেডিসিন-এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে তারা একই ধরনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
যোরা মদ্যপান, ধূমপান ও লাল মাংসের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, তাদের তুলনায় যারা এসব খাবার এড়িয়ে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবার খান – তাদের আয়ু ১৭ বছর পর্যন্ত বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে জার্মানির হাইডেলব্যার্গ শহরের ক্যানসার গবেষণাকেন্দ্র। তাদের ২২,০০০ নারী ও পুরুষকে নিয়ে করা গবেষণায় নিকোটিন সেবনের কারণে মহিলাদের গড় আয়ু সাত আর পুরুষদের নয় বছর কমে গেছে।
ফরাসি গবেষকরা বলছেন, সাধারণত করোনাভাইরাস ‘সেল রিসেপ্টর’ কে সংক্রমণের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করে। আর নিকোটিন এই ‘সেল রিসেপ্টর বা এসিইটু'-এর সাথে যুক্ত থাকে। ফলে এটি সংক্রমিত হতে বাধা দেয়। প্যারিসের একটি হাসপাতাল এই গবেষণার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার দুই স্নায়ুতত্ত্ববিদ জে এস এল ওল্ডস এবং নাদিন কাব্বানি একই বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন মার্চের ১৮ তারিখে, এফইবিএস জার্নালে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিকোটিন ‘সেল রিসেপটর'গুলোকে বরং উদ্দীপিত করে। ফলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এক্ষেত্রে অনেক বেশি।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে যে আরেও গবেষণা ও পরীক্ষার প্রয়োজন বলে জানান গবেষকরা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, তার আগেই এই গবেষণার বিষয়টি জানাজানি হলে ধূমপায়ীরা করোনা সংক্রমণের বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে সবার সঙ্গে মেলামেশা শুরু করে দিলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। আর তাছাড়া নিকোটিন একটি বিষাক্ত পদার্থ, ফলে এটি কাউকে গ্রহণের পরামর্শ না দেয়া ভালো বলে মনে করেন তাঁরা। একটি সিগারেটে ১২ মিলিগ্রাম নিকোটিন থাকে।
নিকোটিনের কারণে খাদ্য পরিপাক তন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ ব্যহত হয়, প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সূত্র: ডয়চেভেলে
আরও পড়ুন:
করোনায় ধূমপায়ীদের ক্ষতি কম হয়: ডেভিড হকনি
এস
মন্তব্য করুন