ঢাকারোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

‘লিঙ্গ সমতায় আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে’

আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০২২ , ০৭:৪৩ পিএম


loading/img
ছবি : সংগৃহীত

বিগত এক যুগ ধরে নারীদের অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও নারীরা এখনও পিছিয়ে আছে। এখনও নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঅধিকার পায়নি। আজকে নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা হলেও এখনও বিভিন্নক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তবে এই বৈষম্য দূরীকরণে শুধু আইন নয়, প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া আমাদের মনোজগতেরও পরিবর্তন করতে হবে।  

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটর পদ্মা লাইফ টাওয়ারস্থ বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ আইপি টিভির কার্যালয়ে ‘স্বাধীনতা পায় পূর্ণতা, নিশ্চিত হলে লিঙ্গ-সমতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ টিভি। 

বৈঠকে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, পৃথিবীতে যত ঘটনা আছে সবকিছুর ওপরে হলো রাজনীতি। যদি রাজনীতির সিদ্ধান্ত সঠিক না হয়, তাহলে দেশের উন্নতি কখনো সম্ভব না। বাংলাদেশের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। আজকে তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকতেন বা পুরুষ শাসনে শাসিত হতো তাহলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, কমিউনিটি ইউনিট এবং আমাদের দেশে যারা তৃতীয় লিঙ্গের আছেন তাদের অগ্রগতি আজকের এ সময়ে সম্ভব হতো না।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সহজ ভাষায় বলতে গেলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুলিশ, প্রশাসন, রাজনীতিতে, বিচার ক্ষমতায় নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীদের অবস্থান লক্ষ্যণীয়। আর নারীরা নিজের মেধায় তা অর্জন করে নিচ্ছে। এমনকি পূর্বে ধর্ষণের রিপোর্ট দিতেন পুরুষেরা, কিন্তু বর্তমানে নারী পুলিশ থাকায় তাতে নারীরা অংশগ্রহণে সুযোগ পাচ্ছে। বিচার কার্যে নারীদের অবস্থান ছিল না, বর্তমানে তা-ও লক্ষ্য করা যায়। বিমানচালক হিসেবেও নারীদের অবস্থান রয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের অবদানে আজকের বাংলাদেশে দৃশ্যমান নারী-পুরুষের সমতার বিধান যথেষ্ট লক্ষ্যণীয়। 

গ্লোবাল টেলিভিশনের সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপরই আমাদের সবকিছু নির্ভর করে। তাদের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। রাজনৈতিক দল হিসেবে কেবল আওয়ামী লীগেই সর্বোচ্চ ২৪% নারী সংসদ সদস্য রয়েছে। আমরা এতকিছু করলাম, কিন্তু উত্তরাধিকার আইন করতে গিয়ে ধর্মকে সামনে এনে আটকে দেওয়া হলো। এটাতে হয়তো রাজনৈতির কোথাও না কোথাও কোনো একটা অঙ্গীকার আছে। অথবা কোনো একটা আপোস আছে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, আজকে নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা হলেও এখনও বিভিন্নক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তবে এই বৈষম্য দূরীকরণে শুধু আইন নয়, এর প্রয়োগও করতে হবে। তাছাড়া আমাদের মনোজগতেরও পরিবর্তন করতে হবে। 

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে নারী পুরুষের সম-অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অথচ এখনও নারীদের নারী হিসেবে ট্রিট করা হয়। বাংলাদেশ সরকার নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিয়ে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু এর প্রবেশ পথটি এখনও সেভাবে তৈরি হয়নি। এ পথ আমাদের তৈরি করতে হবে। নারী পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গসহ সবাই যাতে সম্পত্তির অধিকার সঠিকভাবে পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু বলেন, বৈষম্য দূরীকরণে শক্তিশালী লিঙ্গনীতি প্রণয়ন করতে হবে। আমাদের দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও এখনও নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমাদের নারীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা প্রান্তিক অঞ্চলের নারীদের এই সুবিধায় আনতে পেরেছি কী? আজকে আমাদের নারীদের গৃহের কাজকে ছোট করে দেখা হয়। বলা হয়, এটা কী কোনো কাজ হলো? এসব পশ্চাদপদ চিন্তা-চেতনা আমাদের দূর করতে হবে। আর এ কাজগুলো আমাদের মিলেমিশে করতে হবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী আর অর্ধেক পুরুষ। নারীদের বাদ দিয়ে কোনোভাবেই টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সরকার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নারীদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা অতুলনীয়। নারীরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। সমাজে নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। সমাজ উন্নয়নে নারী-পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষসহ সমাজের সকলের মেধা, শ্রম উৎসর্গ করতে হবে।  

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও সমাজকর্মী ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ। তিনি বলেন, সমাজ কর্তৃক কাজ, পোশাক, প্রথাগত আচরণ, চালচলন এবং রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত বিধিনিষেধ দ্বারা বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষের মাঝে বিভাজন রেখা সৃষ্টি করে দেওয়ার নাম লিঙ্গ বৈষম্য। নানান সময়ে এই বৈষম্যের মুখোমুখি হয় নারীরা এবং এই বৈষম্য নারীদের ক্ষমতায়নের পথে প্রধান অন্তরায়। নারীর ক্ষমতায়ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং রাজনৈতিক অবকাঠামোতে অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি মাধ্যম বা উপায়। যার মাধ্যমে নারীরা নিজেদের মেধা ও যোগ্যতাকে প্রকাশ করতে পারেন এবং নিজেদের অধিকারগুলো আদায়ে সচেষ্ট হতে পারেন।

ডা. ফেরদৌস আহমেদ খন্দকার বলেন, বাংলাদেশে কন্যাশিশুর জন্ম হলে বাবা-মায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়। আমাদের দেশে একটা কন্যাসন্তান যখন নবম-দশম শ্রেণিতে ওঠে তখনই তাকে বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তারা একইসঙ্গে বেড়ে ওঠে। যা আমাদের দেশে দেখা যায় না। আমরা যদি আমাদের দেশে ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে পারি, তাহলে এই সমস্যা থাকবে না।

দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক ড. এম এম মাজেদুল ইসলাম বলেন, নারীদের পিছিয়ে রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অসম্ভব। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। কাজেই তাদের বাদ নিয়ে কিংবা পিছিয়ে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বরং উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের জেন্ডার ইকুইটিতে ৩ ধরনের সফলতা রয়েছে বলে আমি মনে করি। রাজনৈতিক অঙ্গন, শিক্ষাক্ষেত্র ও হিউম্যান এমপ্লয়মেন্টে সফলতার কথা বলা যায়। দক্ষিণ এশিয়াতে জেন্ডার ইকুইটিতে আমাদের সফলতার পেছনে এই তিনটাই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।

সাদা-কালো হিজড়া উন্নয়ন সংঘের সভাপতি অনন্যা বণিক বলেন, আমরা অনেকটা সময় পেছনে ফেলে এসেছি। বহু কঠিন সময় পার করে এসেছি। যে সময়টাতে আমাদের লিঙ্গের কোনো স্বীকৃতি ছিল না, ভোটাধিকার ছিল না। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে আমরা লিঙ্গের স্বীকৃতি পেয়েছি, ভোটাধিকার পেয়েছি, সরকারি চাকরির অধিকার পেয়েছি। আমরা এখন দেশের জন্য কাজ করতে পারছি। দেশের উন্নয়নে নিজেদের অবদান রাখতে পারছি।

সভাপতির বক্তব্যে বিবার্তা২৪ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি বলেন, এদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার নারী কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অবস্থান কতটুকু? শুধু মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছাড়া নারী নেতৃত্ব আমরা সেভাবে দেখি না। তাছাড়া, প্রায় জায়গায় সংরক্ষিত নারী কোটা দেখা যায়। অনেক যোগ্য নারী আছেন, যাদেরকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।

দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ডিসিশন মেকিংয়ের জায়গাগুলোতে নারীদের আরও বেশি অংশগ্রহণ থাকতে হবে। আমাদের সংবিধানে নারী-পুরুষ প্রত্যেকের সমান অধিকার। এত ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা তখনই পূর্ণতা পাবে, যখনই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এক কাতারে হাঁটতে পারব। 
 
বিবার্তা২৪ ডটনেটের সাহিত্য সম্পাদক সামিনা বিপাশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা জার্নালের প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেল, গৌরব ৭১’এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুপম প্রমুখ।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |