নির্দিষ্ট কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে ‘একটি দলের মহাসচিব ও দায়িত্বশীল নেতারা... পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
বুধবার (৩০ মার্চ) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
এর আগে ২৫ মার্চ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পরের দিন ২৬ মার্চ রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি পার্টির সিনিয়র নেতা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এর চেয়ে হাস্যকর...। কী আর বলব।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোষ হলো সত্য কথাটাও ঠিকমতো বলতে পারে না। অথচ, একটা পার্টির সিনিয়র নেতারা মিথ্যে বলতে বলতে সত্যে পরিণত করতে চান।’
একই অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতির ওপর অবরোধ আরোপ করতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা লবিস্ট নিয়োগ করছেন, জিএসপি বন্ধ করতে চিঠি লিখছেন।
ওই রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা রাজনীতি করেন জনগণের জন্য, আবার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আপনারা কারা, হু আর ইউ? কী চান আপনারা?
এরপর ২৮ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে (খালেদা জিয়া) নিয়ে কটূক্তি করা বিস্ময়কর; সরকার পরিবর্তন হলে জবাবদিহি করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিবের ওই বক্তব্যের পর আজ বিবৃতি দেয় পুলিশ। তবে বিবৃতিতে নির্দিষ্ট কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে ‘একটি দলের মহাসচিব ও দায়িত্বশীল নেতারা’ বলা হয়।
আজকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনা করেন বাঙালি পুলিশ সদস্যরা। সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেন এবং ১৪ হাজার পুলিশ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের উত্তরাধিকারী বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা সেবার সুমহান ব্রত নিয়ে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
জঙ্গিবাদ দমনসহ দেশের প্রতিটি সংকটে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্ভীক পুলিশ সদস্যরা দেশপ্রেমের দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছে।
অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ আজ যেকোনো বিবেচনায় নিরাপদ। ফলে বিদেশি বিনিয়োগসহ সব ধরনের বিনিয়োগে বাংলাদেশকে আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনায় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্য করে নয় বরং বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সত্য ও সঠিক ইতিহাসের আলোকে বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বাস করে, রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন এবং করবেন। সভ্য সমাজ ব্যবস্থায় রাজনীতিবিদদের সম্মানের সঙ্গে দেখা হয় এবং বাংলাদেশ পুলিশ বরাবরই রাজনীতিবিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে আসছে।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, মহান স্বাধীনতার মাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনাকারী গর্বিত পুলিশ বাহিনীর প্রধান ও ডিএমপি কমিশনারের বিরুদ্ধে একটি দলের মহাসচিব ও দায়িত্বশীল নেতারা বিভিন্ন সমাবেশ ও গণমাধ্যমে আপত্তিকর, আক্রমণাত্মক, বিভ্রান্তিকর ও বিব্রতকর বক্তব্য দিয়েছেন; যা পরিকল্পিত, অশোভনীয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
অতীতের বিভিন্ন সময়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারী একটি দলের নেতাদের মুখে পুলিশের মতো পেশাদার বাহিনী সম্পর্কে এ ধরনের হুমকি প্রদানপূর্বক বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত। ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন, এটাই বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন প্রত্যাশা করে।
বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা রাষ্ট্রের কল্যাণে ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা প্রদানসহ স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে। দেশের শান্তিপ্রিয় ও উন্নয়নকামী জনগণ পুলিশের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ তাদের এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আইনসঙ্গত সকল কাজে পুলিশের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন বজায় রাখবে বলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।