চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলংকা ও রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।
শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর বৈদেশিক ঋণ নিয়ে সর্তক অবস্থানে রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে সরকার এ পর্যন্ত কত বিদেশি ঋণ নিয়েছে, ঋণের বিপরীতে সুদের হার কত, বছরে কত টাকা শোধ করতে হবে এবং ঋণ জিডিপির অনুপাতসহ ঋণের সবকিছু বিশ্লেষণ করে অর্থ মন্ত্রণালয় সবিস্তারে তুলনামূলক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে শুধু বাংলাদেশ নয়, এর সঙ্গে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ঋণ ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সরকারকে সুদসহ বৈদেশিক ঋণ বাবদ ২০ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এরমধ্যে শুধু সুদ খাতেই ব্যয় হবে ৬ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। বাকি ১৪ হাজার ৫১ কোটি টাকা যাবে ঋণ খাতে।
একই বছরে বৈদেশিক ঋণ বাবদ শ্রীলংকাকে গুনতে হবে ৭৩ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের চেয়ে ৫৩ হাজার ৩২০ কোটি টাকা বেশি। পাশাপাশি পাকিস্তানকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। এটিও বাংলাদেশের চেয়ে ৮৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।
এছাড়া বাংলাদেশের জনগণের ওপর মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণও তুলনামূলক কম। বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে এ পর্যন্ত যে ঋণ নেওয়া হয়েছে তার গড় সুদ হার শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের বেশি। এক্ষেত্রে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। অপরদিকে রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ উল্লিখিত দুটি দেশের চেয়েও বাংলাদেশের দ্বিগুণ অবস্থানে আছে। তবে ঋণ যদি জিডিপির তুলনায় বেশি হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি বিপদ আসতে পারে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ঋণ জিডিপির অনুপাত বাংলাদেশের কম।
এ বিষয়ে বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি বলেন, ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের অতীত রের্কড ভালো। কখনো খেলাপি হয়নি। তবে মনে রাখতে হবে, কয়েক বছর আগেও শ্রীলংকা ভালো অবস্থানে ছিল। খুব দ্রুত এর অবনতি হয়েছে। ঋণ পরিশোধে দেশটি এখন খেলাপি হয়ে গেছে। এর থেকে ভবিষ্যতের শিক্ষা হচ্ছে ঋণ ও অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে পরিস্থিতি দ্রুত পালটে যেতে পারে। এ জন্য ঋণ ও অন্যান্য ব্যয় ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দ্রুত পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ভালো অবস্থানে। তবে বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কম সুদে নিতে হবে। বড় মেগা প্রকল্পে নেওয়ার আগে এর অর্থায়ন কোথা থেকে কিভাবে হবে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি ঋণ নির্ভরতাও কমানোর চেষ্টা থাকতে হবে।’
বিদেশি ঋণ নিয়ে শ্রীলংকার অর্থনীতি বিপর্যয়ের কারণে সম্প্রতি বিভিন্ন মহলে বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থান কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মেগা প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রকল্পের অর্থায়ন কোথা থেকে হবে এসব বুঝে ঋণ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। একইভাবে বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নিজেই গণভবনে অর্থমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বৈদেশিক ঋণে বাংলাদেশ ঝুঁকি সীমার নিচে আছে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস।