ঢাকামঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

মোখা’র প্রভাব : এলএনজি টার্মিনাল বন্ধে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট

আরটিভি নিউজ

শনিবার, ১৩ মে ২০২৩ , ১১:৫৪ পিএম


loading/img

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ঢাকাসহ সারা দেশে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে রান্নার গ্যাসের চাপ কমে যায়। অপরদিকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। ঢাকার মিরপুর, ধনিয়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংকটের কথা জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।

কোথাও কোথাও বিদ্যুতের পাশাপাশি সকাল থেকে ঢাকার বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে গ্যাসের চাপ কমে যায়। বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে অনেক বাসায় পানি সরবরাহ সমস্যা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এক বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে শুক্রবার (১২ মে) রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র যেমন চট্টগ্রাম, মেগনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ওইসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, আংশিক চালু থাকছে। বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতি থাকার কারণে এ সময় ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গাতেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বার্তায় আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বর্তমান পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে যাওয়া মাত্রই মহেশখালির দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পুনঃস্থাপন করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা এবং গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পুনরায় পূর্ণ সক্ষমতায় চালু করবে। সম্মানিত গ্রাহক আপনাদের সাময়িক অসুবিধার কারণে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।  

মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, দেশে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ৩০ শতাংশেরও বেশি চাহিদা পূরণ করা হয়। আমদানি করা এসব এলএনজি মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার জন্য মহেশখালীর অদূরে দুটি ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করা আছে।

বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ধেয়ে আসতে থাকায় ভাসমান টার্মিনাল দুটি শুক্রবার (১২ মে) রাত ১১টার দিকে নির্ধারিত স্থান থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে ওই দুটি টার্মিনাল থেকে এতোদিন দৈনিক গড়ে যে ৭০০ এমএমসিএফ গ্যাস আসতো তা বন্ধ হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্প কারখানার পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ জানান, এলএনজির সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কমে গেছে। এলএনজি থেকে তিতাস ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেত, যা এখন কমে গেছে। এটাই বর্তমান গ্যাস সংকটের কারণ।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালায় দুঃখ প্রকাশ করে এক বার্তায় বলা হয়, ঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া টার্মিনাল দুটি দ্রুত পুনঃস্থাপন করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে। তবে মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ বা আংশিক চালু থাকতে পারে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) উৎপাদন বিভাগের সদস্য এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, মোখার প্রভাবে কয়েকদিন সমস্যা থাকবে। কেবল এলএনজি বন্ধ থাকার কারণে দুই হাজার মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি উৎপাদন কমে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে এবং আরও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হবে।

রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে আজ মধ্যরাত নাগাদ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।

আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এ ছাড়া উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |