ঢাকাবুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১

‘ডেঞ্জার জোন’ ডাউকি, বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ১৬ আগস্ট ২০২৩ , ০১:৩০ পিএম


loading/img

ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ হয়ে উঠেছে ‘ডাউকি ফল্ট’। ঢাকায় গত সোমবার (১৪ আগস্ট) রাতে যে ভূমিকম্প হয়েছে সেটির উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের ভূগর্ভের ডাউকি চ্যুতি নামে পরিচিত ফাটল বরাবর। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। এই মাত্রা গত ২০ বছরে দেশের ভেতরে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। গত কয়েক বছরে এই চ্যুতিরেখায় বেশ কিছু ভূমিকম্প হয়েছে। এর ফলে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

সাধারণত রিখটার স্কেলে ৫–এর ওপরে গেলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প বলা হয়। এর নিচে হলে তাকে মৃদু কম্পন হিসেবে গণ্য করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে উৎপত্তি সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই। যার মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। এ ছাড়া গত এক বছরে বাংলাদেশে ১৭টি ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ভূমিকম্প ছিল ৫ মাত্রার বেশি। এর মধ্যে গত সোমবারের ভূমিকম্প ছাড়া বাকি দুটি ভূমিকম্পের একটি ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট হয়। যার মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১। আর আরেকটি ভূমিকম্প হয় চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি। ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ২। এ ছাড়া ১৪টি ভূমিকম্পের মাত্রাই ছিল ৪ থেকে ৫–এর মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার যে ভূমিকম্প অনুভূত হয় তার উৎস ছিল ঢাকা থেকে ২২৮ কিলোমিটার দূরে সিলেটের কানাইঘাট ও ভারতের আসাম সীমান্তের কাছে। ভূগর্ভের ১০ কিলোমিটার গভীরে এর উৎপত্তি। ভূমিকম্পটির কম্পন রাজধানীসহ সারাদেশে ভালোই অনুভূত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান রুবায়েত কবির বলেন, সাধারণত দেশের ভেতরের উৎস থেকে যেসব ভূমিকম্প হয়, তা চার থেকে পাঁচ মাত্রার হয়ে থাকে। এতে মৃদু কম্পন ও কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হওয়া ছাড়া তেমন ক্ষয়ক্ষতি হতে দেখা যায় না। গত ২০ বছরে সাড়ে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হতে আমরা দেখিনি। সোমবারের ভূমিকম্পের উৎসস্থলটি ডাউকি চ্যুতি বরাবর। সেখানে ভূমিকম্প বাড়ছে। এটা ওই এলাকায় বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের হিসাবে, সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। সিলেটকে বরাবরই ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রায়ই এখানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। গত দু’বছরে সিলেট অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে সৃষ্ট বেশ কয়েকটি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ, ছাতক, বিশ্বনাথ, সিলেট সদর এবং ডাউকি ফল্ট জৈন্তাপুরে কয়েকটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। ২০২১ সালে ১০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে যে ১০ দফা ভূমিকম্প হয়েছে। এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তি ছিল ডাউকি ফল্টে। এজন্য সিলেটের স্থানীয় এ ভূমিকম্প নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও চিন্তিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে। ফলে ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। আর সিলেট থেকে ঢাকার অবস্থান খুব বেশি দূরে নয়। সেখানে যদি ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয় তাহলে এর বড় প্রভাব গোটা দেশেই। 

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ঢাকায় মোট ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ এবং সিলেট জেলায় ১ লাখ বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ৭৫ শতাংশই ছয়তলা বা তার চেয়ে বেশি। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই ভবনগুলো এবং এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বাংলাদেশের সিলেট ও ভারতের আসাম মিলিয়ে ডাউকি চ্যুতি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় তিন শ কিলোমিটার বিস্তৃত। এর আগে, ১৮৯৭ সালে ‘ডাউকি ফল্টে’ ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। ওই ভূমিকম্পের উৎস ছিল ঢাকা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। সেসময় ভূমিকম্পে ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলসহ ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |