ঢাকারোববার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

আওয়ামী আশীর্বাদপুষ্ট ‘আটাবে’ চরম অস্থিরতা

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ১৪ মে ২০২৫ , ০১:২২ পিএম


loading/img

শেখ হাসিনার পতনের নয় মাসেও বিমান টিকেট বিক্রেতা এজেন্সি মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর শীর্ষ নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ ও লুটপাট এবং বিদেশে পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে কমিটি বাদ দিয়ে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানালেও রহস্যজনক কারণে এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদেরকে ‘শোকজ নোটিশ’ দেওয়ার পর নিয়মিত অফিসে না আসায় সংগঠনের দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অনেকটা অভিভাবকহীন অবস্থায় চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে আটাব সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

আটাব সূত্র জানিয়েছে, পতিত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আটাবের বর্তমান সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহের নেতৃত্বাধীন বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে সেখানে দ্রুত প্রশাসক নিয়োগ করে পরবর্তী কার্যক্রম চালাতে তিন দফা দাবিতে গত এপ্রিল মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন আটাব সংস্কার পরিষদ। তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর আটাব কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করে আটাবকে কলঙ্কমুক্তকরণের পাশাপাশি বিতর্কিত নেতাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানান তারা।

কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আটাবের বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিব পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করে আটাব সংস্কার পরিষদের নেতারা গত ১৮ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। একই দিন তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট বর্তমান আটাব কমিটি বাতিল করে আটাবকে কলঙ্কমুক্তকরণের পাশাপাশি বিতর্কিত নেতাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী আটাব কমিটিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) ও টাস্কফোর্সের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

বিজ্ঞাপন

এরই প্রেক্ষিতে গত ২২ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা ‘কেন বর্তমান আটাব কমিটিকে বাদ দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে না’ মর্মে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে। একইসঙ্গে কমিটিকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। এতে বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিব অনেকটাই বেকায়দায় পড়ে যান। তারা নৈতিক শক্তি হারিয়ে আটাব অফিসে অনিয়মিতভাবে আসা যাওয়া করেন।

আটাব সূত্র জানায়, শোকজ নোটিশ জারি হওয়ার পর মাঝখানে সভাপতি ও মহাসচিব আটাব অফিসে নিয়মিত না এসে তারা মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে উঠেপড়ে লাগেন। ফলে আটাব কার্যালয়ের নিয়মিত কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে।

অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের আগ পর্যন্ত আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফের বিরুদ্ধে কোনো ট্রাভেল এজেন্সি এমনকি কোনো এয়ারলাইনস কোনো কথা বলার সাহস পেত না। এয়ারলাইনসগুলো তার অনৈতিক টিকিট গ্রুপ ব্লকিংয়ের কাজে সহযোগিতা করতে বাধ্য হয়েছিল। নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়দানকারী এয়ার স্পিড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বর্তমান আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে ব্লক করে এয়ার স্পিড নামক একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে প্রচার করেন এবং চড়া দামে বিক্রি করে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

২০২৩-২৪ সালে মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের (লেবার) টিকিটের গ্রুপ ব্লকিং এবং ২০২৫ সালে সৌদিগামী (লেবার) টিকিট ব্লকিংয়ের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধি করে বিক্রি করেছেন। এখন আওয়ামীপন্থী আটাব সভাপতি নিজের অপকর্ম ঢাকতে এবং বর্তমান সরকারকে বিতর্কিত করার জন্য ট্রাভেল এজেন্সি এবং এয়ারলাইনসের মধ্যে বিরোধ তৈরি করে এয়ার টিকিট ব্যবসায় নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে এদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা বাহাউদ্দিন নাসিমের আত্মীয় পরিচয়ে এবং প্রশাসনের সহায়তায় ২০১১ সাল থেকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন দিয়ে দুইবার মহাসচিব এবং বর্তমান সভাপতি হিসেবে আটাব দখল করে আছেন। ভুয়া ভোটার তালিকা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট এবং প্রতিপক্ষকে কেন্দ্র থেকে বের দিয়ে স্বঘোষিত ফলাফল নিয়ে বারবার নির্বাচিত হয়ে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছেন। 

এ ছাড়া গত জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে গণআন্দোলন হয়েছিল তা প্রতিহত করতে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়ে গত ৩ আগস্ট একটি ষড়যন্ত্রমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বর্তমান আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা প্রয়াত মুহায়মিন সালেহের কন্যা আফসিয়া জান্নাত সালেহ তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ নেত্রী পরিচয়ে আটাব নেতৃত্বে আসেন এবং নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে কমিটির সবাইকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন।

আটাব সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক মো. গোফরান চৌধুরী বলেন, আটাব সভাপতি ও মহাসচিব তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আটাব অনলাইন বিলুপ্ত ঘোষণা করে নামে-বেনামে চেকের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 

তিনি বলেন, আটাবের বর্তমান সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ আওয়ামী লীগপন্থী এবং তারা বিভিন্নভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে আমরা তাদের বিচার চাই।

আটাব সংস্কার পরিষদের সদস্য সচিব মো. আমির হোসেন আরিফ বলেন, এর আগেও আটাব সভাপতি সালাম আরেফ বিভিন্ন সময়ে টিকিটের গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এসব অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান কমিটিকে বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ বলেন, যারা টিকিট সিন্ডিকেট করে এক লাখ টাকার টিকিট দুই লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারছে না, সেই চক্রই আটাব সংস্কার পরিষদের নামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আটাবের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। বিগত সরকারের দোসর বলে আমাদের যে তকমা দেওয়া হচ্ছে তা সঠিক নয়। 

তিনি বলেন, আমরা সংগঠন করি সদস্যদের স্বার্থে, যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তাদের সঙ্গে আটাব নেতাদের মিশতে হয়, যেতে হয়। এতে দোষের কিছু নেই। 

এ ছাড়া আটাব অনলাইনের লাখ লাখ টাকা সভাপতি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগও মিথ্যা বলে আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ দাবি করেন।

আরটিভি/আইএম/এআর

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |