ঢাকাবুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

বন্দিশালা থেকে ফিরলেন ১৫৮ বাংলাদেশি

ডয়চে ভেলে

বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫ , ০৬:২৮ পিএম


loading/img
দেশে ফেরা বাংলাদেশিরা। ছবি : সংগৃহীত

উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির একটি বন্দিশালায় আটক থাকা ১৫৮ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল পৌনে ৬টায় বুরাক এয়ারের একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকায় পৌঁছেছেন।

লিবিয়ার ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছে, ত্রিপোলির তাজুরা ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন এই ১৫৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহযোগিতায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে আইওএম বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট ভাড়া করে, এটির নম্বর ইউজেড ২২২।

বিজ্ঞাপন

১৬ জুন (সোমবার) লিবিয়ার ত্রিপোলির মেতিগা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে বিমানটি। ১৭ জুন (মঙ্গলবার) সকাল পৌনে ৬টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা বিমানটি। অবতরণের পর ১৫৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তারা।

সূত্র জানিয়েছে, লিবিয়া থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে পোঁছানোর আশায় লিবিয়া গেছেন। তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের ফাঁদে পড়েছিলেন। কিন্তু লিবিয়া পৌঁছানোর পর তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শেষপর্যন্ত তারা আটক ছিলেন তাজুরা ডিটেনশন সেন্টারে।

বিমানবন্দরে লিবিয়া থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশিরা যেন আর কখনও এই ভয়ংকর পথে পা না বাড়ান, সেজন্য তাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, আগের দিন লিবিয়ার অভিবাসন অধিদপ্তরের অভ্যর্থনা হলে দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ও মিনিস্টার (রাজনৈতিক) কাজী আসিফ আহমেদের নেতৃত্বে দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের বিদায় জানান। দেশে ফেরত পাঠানোর আগে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে দূতাবাসের নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। একইসঙ্গে আগামীতে নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিয়মিত পথে বিদেশে আসার পরামর্শ দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

তারও আগে তাজুরা ডিটেনশন সেন্টার পরিদর্শন করে আটক বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেকের জন্য ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করে দূতাবাস। পরবর্তীতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে এবং আইওএম-এর সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশিদের বিনা খরচে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক বাংলাদেশির কথা উল্লেখ করেছেন দূতাবাসের কর্মকর্তা। ওই বাংলাদেশির বাড়ি বগুড়া। বেশ কয়েক বছর ধরেই লিবিয়ায় ছিলেন তিনি।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আগে দূতাবাসের অধীনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই বাংলাদেশি থাকতে চাইতেন না। মাঝে মধ্যেই পালিয়ে যেতেন। অনিশ্চয়তা জেনেও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে লিবিয়ায় থেকে যেতে চাইতেন তিনি। শেষপর্যন্ত ওই বাংলাদেশিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে বলে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। নিরাপত্তার কারণে ওই বাংলাদেশির নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি ইনফোমাইগ্রেন্টস।

আরো একটি ফ্লাইটের প্রস্তুতি চলছে দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, ১৮ জুন আরো একটি ফ্লাইটে লিবিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের আইওএম-এর সহযোগিতায় দেশে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। তবে, এই ফ্লাইটে কত জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি। বলেন, ওই ফ্লাইটে যেসব বাংলাদেশিরা ফিরবেন, তাদের সবাই ত্রিপোলিতেই থাকেন। তাদের অনেকে লিবিয়ায় কাজ করতে এসে নানা ধরনের বিপদের মুখে পড়েছেন। কেউ কাজ হারিয়েছেন, কেউ প্রতারিত হয়েছেন। এখন দেশে ফিরে যাওয়ার বিমান ভাড়ার অর্থটুকুও তাদের কাছে নেই। তাই আইওএম-এর সহযোগিতা নিয়ে এসব বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস। ১৮ জুনের ফ্লাইটে যেসব বাংলাদেশিরা দেশে ফিরে যাবেন তাদের আজকের মধ্যেই লাগেজ জমা দেয়া ও শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করার অনুরোধ জানিয়েছে দূতাবাস। যারা লাগেজ জমা দিতে বা শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হবেন, তারা ভবিষ্যতে আইওএম-এর প্রত্যাবাসন সেবা নিতে জটিলতার মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে দূতাবাস।

এদিকে, ১৮ জুনের ফ্লাইটের জন্য ৬১ জন বাংলাদেশির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, সংখ্যাটি কম-বেশি হতে পারে বলে জানা গেছে। দুই বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বাংলাদেশির প্রত্যাবাসন ইনফোমাইগ্রেন্টসকে দূতাবাস জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত নয় হাজার ১৮৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে লিবিয়া থেকে দেশে ফেরানো হয়েছে।

২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৬ জুন পর্যন্ত মোট পাঁচ হাজার ৪২২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিরাপদে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে৷ এসব প্রত্যাবাসন আইওএম এর সহযোগিতায় হয়েছে। ফিরছেন অন্য দেশের অভিবাসীরাও এক দশকে লিবিয়া থেকে এক লাখ অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর মাইলফলক অর্জন করেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম। ২০১৫ সাল থেকে লিবিয়ায় অনিয়মিতভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় নিজ নিজ দেশ ফেরত পাঠানোর কাজটি করে আসছে আইওএম।

স্বেচ্ছাসেবী মানবিক প্রত্যাবর্তন (ভিএইচআর) কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে আইওএম। ১৩ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইওএম জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত আফ্রিকা ও এশিয়ার ৪৯টি দেশে অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসাবে নাইজেরিয়া, মালি, নাইজার, বাংলাদেশ এবং গাম্বিয়ার নাম উল্লেখ করেছে আইওএম। আইওএম এর কর্মসূচির আওতায় যারা নিজ দেশে ফিরে গেছেন তাদের মধ্যে অন্তত ৭৩ হাজার পুরুষ, ১৭ হাজার নারী এবং ১০ হাজারের বেশি শিশু। শিশুদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন অভিভাবক বিহীন।

আইওএম বলছে, এই পরিসংখ্যান থেকে লিবিয়ার অভিবাসীদের সংখ্যা, বৈচিত্র্য আর অভিবাসী ব্যবস্থাপনায় দেশটির দুর্বল অবস্থার চিত্র পাওয়া যায়।

আরটিভি/এএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |