সহিংসতায় আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে শিশু শিক্ষার চাহিদা মোকাবেলায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা শিশুরা তাদের জন্মভূমিতে ফিরে গিয়ে শিক্ষার অধিকারসহ অন্যান্য শিশু অধিকার যেনো ভোগ করতে পারে সেজন্য মিয়ানমারে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী ।
সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ‘নারী ও মেয়েশিশু শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ’ শীর্ষক গোলটেবিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রস্তাব করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রথমত, আমাদেরকে বুঝতে হবে যে সংঘাত, জাতিগত নিধন ও গণহত্যার ঘটনায় পালানো এসব শিশু প্রচন্ড রকমের মানসিক আঘাত বহন করছে। তাদের মনো-সামাজিক চাহিদার বিষয়টি আমাদেরকে দেখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয়ত, সংঘাত ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ চানানোর ঘটনায় পালিয়ে আসা এসব শিশু কোন সাধারণ বিদ্যালয়ে নিজেদের অভ্যস্ত করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করা যায় না। ‘সুতরাং, তাদের জন্য অনানুষ্ঠানিক ও জীবনধর্মী বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা জরুরি।’
তিনি বলেন, তৃতীয়ত, জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা শিশুরা বর্তমানে ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বসবাস করছে। এসব শিশুকে নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা ও জাতিগতভাবে শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের শিক্ষা তাদের প্রকৃত পরিচয় ধরে রাখতে সহায়তা করবে।’ এ শিক্ষা এক সময় তাদের দেশে ফিরে তাদের জীবনকে এগিয়ে নিতেও প্রস্তুত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিশুদেরকে শিক্ষা প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের প্রতি মিয়ানমারে বিনিয়োগ করতেও আহ্বান জানাচ্ছি যাতে এসব শিশু তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে শিক্ষার অধিকারসহ তাদের অন্যান্য অধিকার ভোগ করতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সারাবিশ্বের বহু মানুষ সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়ছে। এ ধরনের চরমপন্থা লোকজনকে তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করছে। তিনি বলেন, ‘সাড়ে ৬ কোটির বেশি মানুষ বর্তমানে গৃহহীন রয়েছে এবং প্রতিদিন এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।’
-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : বাংলাদেশিদের জন্য আমিরাতে আবারও ভিসা ট্রান্সফার চালু
-------------------------------------------------------
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব শরণার্থী এবং জোরপূর্বক বিতাড়িত হওয়া মানুষের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও জটিল। তারা ভীত সন্ত্রস্ত, সর্বস্বান্ত এবং সহিংসতা ও পাশবিকতার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা বহন করছে। এসব সম্প্রদায়ের বহু লোক তাদের জন্মভূমিতে দশকের পর দশক ধরে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশকে একটি শান্তি-প্রিয় দেশ হিসেবে অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহিংসতা, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, আমরা অন্য দেশের সহিংসতার ধকল বহন করছি। বর্তমানে বাংলাদেশে জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি নাগরিক আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে সহিংসতা ও গণহত্যা ঘটনায় তারা দেশে থেকে পালিয়ে এসেছে। সেখানে তারা কয়েকশ’ বছর ধরে বসবাস করছিল।’
রোহিঙ্গারা দশকের পর দশক ধরে রাষ্ট্রীয় নীতির কারণে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও চলাফেরার স্বাধীনতার অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমন কি তাদের নাগরিকত্ব হরণ করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারে নৃশংসতার কারণে তারা পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশ তাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ‘চরম সংকটকালে আমাদের দেশের জনগণ তাদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে এবং নিজেদের খাদ্য ভাগাভাগি করে খেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রায় ৫৫ শতাংশ শিশু। ‘এসব রোহিঙ্গা শিশুকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানে ইউনিসেফের সাথে অংশীদারিত্বে এক হাজার ১০৬টি শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, এসব কেন্দ্র এক লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা শিশুকে মনো-সামাজিক সহায়তা এবং জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আরও নতুন শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় এবং শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণে আমাদের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে।’
আরও পড়ুন :
- সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে আশা করছি : প্রধানমন্ত্রী
- আকাশপথের নিরাপত্তায় ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ
এমকে