বাংলাদেশ-বাহরাইন কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন
আনন্দ মুখর পরিবেশে বাহরাইনের দ্যা ডিপ্লোম্যাট রেডিসন হোটেলে বাংলাদেশ দূতাবাস, মানামা বাংলাদেশ-বাহরাইন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করে।
চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স এ. কে. এম. মহিউদ্দিন কায়েসের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাহরাইন কাউন্সিল অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার আহমেদ বিন সালমান আল-মুসালাম, বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিকাল অ্যাফেয়ার্স ড. শেখ আব্দুলাহ বিন আহমেদ বিন আব্দুল্লাহ আল খালিফা, নর্দান গভর্নর আলী বিন আল শেখ আব্দুল হুসাইন আল-আসফুর ও জনপ্রশাসন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাইখা রানা বিনতে ঈসা বিন দাইজ আল খালিফা। এছাড়াও শুরা কাউন্সিল এবং কাউন্সিল অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্যবৃন্দ, বাহরাইনস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিকবর্গ, বাহরাইন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ দেশি-বিদেশী বিভিন্ন পেশার লোকজন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস ও বাংলাদেশ-বাহরাইনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি দু’দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিশেষ আয়োজনের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাহরাইন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে যৌথভাবে স্মারক লোগো উন্মোচন ও বিশেষ প্রকাশনা এবং কেক কাটা।
যৌথভাবে প্রকাশিত এই ম্যাগাজিনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব এবং বাহরাইনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাণী প্রেরণ করেন। উক্ত ম্যাগাজিনে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরের উপর দূতাবাস এবং দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত আর্টিকেলসহ উভয় দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দূতাবাসের কার্যক্রম বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স এ. কে. এম. মহিউদ্দিন কায়েস তার স্বাগত বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শাহাদাত বরণ করেছেন সে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বিশেষভাবে বাহরাইনের মহামহিম রাজা হামাদ বিন ঈসা আল খালিফা এবং ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী শেখ সালমান বিন হামাদ আল খালিফার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৪ সালের ৬ জুন তারিখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই বাংলাদেশ এবং বাহরাইনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রেক্ষিতে তিনি বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১-এ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ভ্রাতৃপ্রতিম বাহরাইনের সর্বোপরি সহযোগিতার কামনা করেন এবং একইভাবে বাহরাইনের অর্থনৈতিক ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়িত করতে বাংলাদেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে মর্মে উল্লেখ করেন।
চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও বাহরাইনের মধ্যকার দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন এবং দুই দেশের সাথে ঐতিহাসিক মিল রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন ‘১৯৭১ সাথে দু’টি দেশেরই জন্ম হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর দু’দেশের কাছে সমানভাবে গূরত্বপূর্ণ। এছাড়া বিশ্বে শান্তি বিরাজমান ও প্রতিষ্ঠায় দু’দেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখছে’। তিনি ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌহার্দ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সার্বিক কল্যাণকর কাজ আরো সুসংহত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স অনুষ্ঠানের আগত সকল অতিথিদের সাথে নিয়ে দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অবলোকন করেন, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্কুল বাহরাইন এর শিক্ষার্থীরা দেশীয় গানের সাথে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স সকল অতিথিদেরকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ও বাহরাইনের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও বাহরাইনের যে দু’টি কর্নার স্থাপন করা হয়েছিল তা ঘুরে ঘুরে দেখান। উপস্থিত অতিথিবৃন্দ বাংলাদেশ ও বাহরাইন কর্নার দু’টি দেখে বিমোহিত ও মুগ্ধ হন। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে দুই দেশের ফটোগ্রাফী প্রদর্শনীর বিশেষ আয়োজন করা হয়েছিল।
পরিশেষে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান এবং অতিথিদেরকে সৌজন্যমূলক উপহার হিসেবে যৌথভাবে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ও বিশেষ কিছু দেশীয় পণ্য প্রদান করেন। সবশেষে উপস্থিত সকলকে নৈশভোজের আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে উক্ত অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
উল্লেখ্য, মার্চ মাসে পবিত্র রমজান মাস থাকায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৩তম বার্ষিকীটি বাংলাদেশ-বাহরাইন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের সাথে একত্রে আয়োজন করা হয়।
মন্তব্য করুন