‘ও ভাই হামাক এনা বোন কয়া ডাকো রে’, আবু সাইদের বোনের আহাজারি

আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪ , ১১:০১ পিএম


সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের  (২৪) পরিবার এখন শোকে স্তব্ধ। তাদের বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ। সাঈদের এমন মৃত্যুতে পরিবারসহ পুরো গ্রামে চলছে মাতম।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রংপুর নগরীর পার্ক মোড়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন সড়কে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন আবু সাঈদ। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে পরিবারে কান্নার রোল পড়ে যায়। তার ছোট বোন সুমির আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অশ্রুসিক্ত সুমি বলেন, হামার ভাইয়োক ওরা মেরে ফেলল ক্যান? হামার ভাই বেঁচে থাকলে হামার স্বপ্ন পুরণ হলো হয়। ও ভাই হামাক এনা বোন কয়া ডাকো রে।

বিজ্ঞাপন

পুরো বাড়িতে যখন শোকের মাতম, তখন নির্বাক হয়ে সন্তানের লাশের অপেক্ষায় মা মনোয়ারা বেগম। ফ্যালফ্যাল করে সবার দিকে চেয়ে দেখছিলেন। হঠাৎ হাউমাউ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মনোয়ারা বাবা বাবা বলে ডাকতে থাকেন। আর সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের কণ্ঠে যেন কোনো কথাই নেই। তিনি শুধু সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, হামার ভুল হচে ছেলেটাক বিশ্ববিদ্যালয়োত লেখাপড়া করিবার দিয়া। তুই হামাক ক্ষমা করি দেরে বাবা। তোক নিয়্যা হামার অনেক স্বপ্ন আছিলো।

আবু সাঈদ বাবা-মায়ের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তান ছিল। নিজের ইচ্ছায় ৯ ভাই-বোনের মধ্যে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন তিনি। অভাবের কারণে অন্য ভাই-বোনেরা লেখাপড়া করতে না পারলেও সাঈদ খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে একই ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন আবু সাঈদ।

জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে বেরোবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গ মিছিলে অংশ নেন আবু সাঈদ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, আবু সাঈদ এই আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। এ কারণে মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

দুপুরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত বিক্ষোভ মিছিলটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। তখন ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে শতাধিক টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে পুলিশ। এই সংঘর্ষে মিছিলের সামনে থেকে বুক পেতে দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলী বলেন, এক শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এ ছাড়া আহত অবস্থায় আরও ১৫ জন হাসপাতালে এসেছেন।

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিস্থিতি এখন ভালো নেই। শিক্ষার্থীরা মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধসহ হামলা করা হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজিবি চেয়েছি।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় একজন মারা গেছেন। তবে তিনি কীভাবে মারা গেছেন, তা বলতে পারছি না।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission