ঢাকারোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

কাকে মানাবে বিশ্ব মোড়লের আসনে

এ এইচ মুরাদ

বুধবার, ০৯ নভেম্বর ২০১৬ , ০১:৩৫ এএম


loading/img

চলছে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রিপাবলিকানদের পক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে ভোটের লড়াই এখন তুঙ্গে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতাবশালী রাষ্ট্রের এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে নারীপ্রার্থী নির্বাচন করছেন। তাইতো একে ইতিহাস সৃষ্টির নির্বাচনও বলা হচ্ছে। হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে এক নতুন ইতিহাসই সৃষ্টি হবে।
 
প্রচারণায় অংশ নেবার পর থেকেই নানান বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার ঝড় তোলেন ট্রাম্প। মার্কিন কট্টোরপন্থি এ রিপাবলিকান বেফাঁস বক্তব্য-মন্তব্য করে নানানভাবে নিজেকে আলোচনায় রেখেছেন। এসব ঘটনায় নির্বাচনের আগে অনেকেই বলছিলেন- ভোটের মাঠে ট্রাম্পের ভরাডুবিই বোধহয় হতে চলেছে। তবে এসব বক্তব্য বিপাবলিকান সমর্থকরা কিছুটা বিচলিত হলেও ব্যালট পেপার যে দলীয় বাক্সেই ফেলবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ট্রাম্পও হয়তো সেটিই চাইছিলেন।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে শুরু থেকে হিলারিকে বেশ কৌশলী হিসেবেই দেখা গেছে। এ ফাস্ট লেডির বিরুদ্ধে ই-মেইল কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে নির্বাচনে ট্রাম্প নিজের ভোটের পাল্লা ভারির চেষ্টা করলেও অবশেষে জাদুকরী কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। তাই হিলারির জয়টা অনেক সহজই হয়ে গেলো বলে মনে করছেন তার সমর্থকরা।

সোয়া দু’শো বছরের ইতিহাসের ‘পুরুষতন্ত্র’ ভেঙে আমেরিকা কি তার প্রথম নারী প্রেসিডেন্টকে দেখবে? নাকি ধনকুবের আর বিতর্কিত রিপাবলিকান প্রার্থী সেই ইতিহাস গড়া থমকে দেবেন। পুরো বিশ্ব এখন সে দিকেই তাকিয়ে। হয়তো ভাবছেন- কাকে মানাবে বিশ্ব মোড়লের আসনে।

বিজ্ঞাপন

হিলারি ও ট্রাম্প সম্পর্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘হিলারি সবসময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। অন্যদিকে, ট্রাম্পের রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্তা ছিল না। ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন, ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন। সারাজীবন নিজের জন্যই কাজ করেছেন।’

তিনি বললেন, ‘সাধারণত, আমেরিকানরা মনে করে তাদের প্রেসিডেন্টশিয়াল প্রার্থী হবেন অত্যন্ত সৎ ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে তার উল্টোটিই। আমেরিকার লোকজন এবারের ইলেকশন নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধাবিভক্ত। হয়তো ইলেকশন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ট্রাম্প যে হিংসা-বিদ্বেষ তৈরি করে গেলেন তা অনেকদিন চলবে। ফলে আমেরিকার অভিবাসীদের অনেক দুর্গতি-ভোগান্তি আছে। তাছাড়া আমেরিকায় ফেয়ার ও ফ্রি ইলেকশনের যে সুনামটা ছিল তাও ক্ষুণ্ণ হলো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আশা করছি আমেরিকার এবারের প্রেসিডেন্ট হবেন সৎ। জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, শরণার্থী সমস্যা, ব্রেক্সিট, মধ্যপ্রচ্যের যুদ্ধ- এসব বিষয় হ্যান্ডেল করার মতো অভিজ্ঞ, পরিপক্ক লোকের দরকার। তাই এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ববাসী।’

বিজ্ঞাপন

একনজরে হিলারি
হিলারি ক্লিনটনের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীই শুধু নন, রাজনীতিক হিসেবেও দক্ষ। আইন নিয়ে পড়তে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৮ সালে যোগ দেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে। দীর্ঘদিনের বন্ধু বিল ক্লিনটনকে বিয়ে করেন ১৯৭৫ সালে। ১৯৯৩ সালে বিল ক্লিনটন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলে হিলারি মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিসেবে প্রবেশ করেন হোয়াইট হাউসে। তখন থেকেই তিনি বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত নাম।

বিজ্ঞাপন

২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের সিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন। ইরাক যুদ্ধের মতো বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছেন হিলারি। ২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের পক্ষে মনোনয়ন চেয়ে মাঠে নামেন। তবে রাজনৈতিক সমঝোতায় নিজেকে প্রার্থিতা বাতিল করে প্রতিদ্বন্দ্বী বারাক ওবামার পক্ষেই প্রচারণা চালাতে থাকেন। নির্বাচনের পর ওবামা সরকারের পররাষ্ট্র্র্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান হিলারি।

একনজরে ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম নিউইয়র্কে ১৯৪৬ সালে। বাবা ছিলেন রিয়াল এস্টেট ব্যবসায়ী। তিনিও বাবার ব্যবসার জড়িয়ে পড়েন। ব্যবসায়ী ছাড়াও তিনি মিস ইউনিভার্সের স্পন্সর ছিলেন। রিয়ালিটি শো ছাড়াও রেসলিং ম্যাচ উপস্থাপনা করেছেন। একসময় নিজেকে দেউলিয়া হবার ঘোষণাও দিয়েছেন।

বর্তমানে তিনি ৫৮ তলা একটি ভবন, স্পোর্টস ক্লাব, পুঁজিবাজারেও রয়েছে তার শেয়ার। সবমিলিয়ে ৯শত কোটি ডলার সমপরিমাণ সম্পদের মালিক ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাজনীতিতে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

ভোটের ফল পেতে আর কয়েক ঘণ্টা বাকি। যুক্তরাষ্ট্রে ১২ কোটি ভোটারই নির্বাচিত করবেন আগামীদিনের নেতাকে। ট্রাম্প কিংবা হিলারি নির্বাচনে জয়ের জন্য যে যার মতো বক্তব্য দিয়েছেন। দু’জনেই হয়েছেন বিতর্কিত। তারা দু'জন নীতিগত জায়গা থেকেও আলাদা। তবে যেই হোন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, দেশটির নীতির বাইরে যায় এমন সিদ্ধান্ত কেউই নেবেন না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এইচএম/ এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |