ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
খেলাধুলায় অনন্য এক শিক্ষাঙ্গন
তখনও সূর্যের আভায় আলোকিত হয়নি ক্যাম্পাস। কিন্তু তারুণ্যের ছুটে চলা শুরু হয়েছে। মাঠের মধ্যে চলছে ব্যায়াম। চলছে এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে ছুটে চলা। লক্ষ্য একটাই শরীর সুস্থ রাখা। বলছি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মেধাবী ফুটবলারের কথা। যারা সকালের আভায় নিজেদের তৈরী করছে যোগ্য ফুটবলার হিসেবে।
এই দলের অনেকে দেশের নামকরা ফুটবল ক্লাবে খেলে থাকে। এ দলের কবির ঢাকা বিজেএমসি, বাবু আরামবাগ, রহিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ , সাদ্দাম অগ্রণী ব্যাংক ও রয়েল বিজেএমসিতে খেলে থাকে। ফলে সবসময় তাদের পদচারণায় মুখরিত থাকে ক্যাম্পাস।
এছাড়াও ক্যাম্পাস চলাকালীন সময়ে চোখে পড়বে খেলাধুলার দৃশ্য। আর বিকেলের দৃশ্য দেখলে ক্যাম্পাসকে ফুটবল একাডেমি বলে মনে হবে অনেকের। কারণ ফুটবল কিংবা ক্রিকেট মাঠ সবখানে চলে খেলাধুলা। কেউ খেলছে ক্রিকেট কেউবা ফুটবল।
বিশেষ করে বিশ্বকাপ উন্মাদনার রেশে ক্যাম্পাসে বেড়েছে ফুটবল খেলা। ক্লাসের ফাঁকে বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজে চলে ফুটবল খেলা। কাঁদামাটির সাথে চলে অন্যরকম খুঁনসুটি। বন্ধুত্বের মাঝে চলে কাঁদা ছোড়াছুুড়ির প্রতিযোগিতা। সবই দেখা মেলে ১৭৫ একরের সবুজ ক্যাম্পাসে।
খেলাধুলায় সোনালী অতীত রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। শিক্ষার্থীরা দেশের হয়ে খেলাধুলায় অবদান রাখছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা খেলোয়ার ফাহিমা খাতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। যার বোলিং নৈপুণ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল জয়লাভ করেছে।
আরেকজন আবদুল্লাহ আল হিল কাফি। সবার কাছে নামটি অতি পরিচিত হওয়ার কথা। যার নেতৃত্বে ২০০৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের হয়ে অংশ নেয়। এছাড়াও দেশের দ্রুততম মানব খ্যাতি পাওয়া শামসুদ্দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী ছিলেন।
যিনি ২০০৪ সালে গ্রীসে অনুষ্ঠিত ২৮তম অলিম্বিক গেমসে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সবচেয়ে গৌরবের বিষয় হচ্ছে তামান্না খাতুন। যিনি ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত যুব বিশ্ব হকি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। একই বছর তিনি এ্যাথলেটিক্সে বিশেষ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কার গ্রহণ করেন।
এছাড়াও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি অন্যদের কাছে পরাশক্তি দল হিসেবে পরিচিত। এ পর্যন্ত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়। ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফুটবল আমার ধ্যান-জ্ঞান। আমি সাইফ স্পেটিং ক্লাবের হয়ে খেলে থাকি। খেলাধুলার কারণে ইবি ক্যাম্পাসে আমার খুব ভালো লাগে। আমি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে খেলতে চাই।’
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আসার পর খেলাধুলা দেখে আমার ভালো লাগতো। পরবর্তী সময়ে আমি বাস্কেটবল খেলা শুরু করি। আমার বন্ধু আমাকে সহযোগিতা করে। এবছর আমি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলি এবং চ্যাম্পিয়ন হই।’
বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পপি খাতুন বললেন ভিন্নকথা। তিনি আরটিভি অনলাইনকে জানালেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হলো প্রতিভা বিকাশের জায়গা। এই জায়গায় সবাই নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগায়। আমিও ক্যাম্পাসে এসে আমার প্রতিভাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। এবছর আমি আন্তঃহল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি এবং চ্যাম্পিয়ন হই। আমাদের ক্যাম্পাস খেলাধুলায় অনেক এগিয়ে।’
গণিত বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রাফসান বুলবুল বলেন, ‘সুস্থ দেহ এবং সুন্দর মনের সম্বনয় সাধনে খেলাধুলার বিকল্প নেই। ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাস আমাকে মেলে ধরার অনুপ্রেরণা জোগায়। আমি এটিকে উপভোগ করি।’
এরকম অনেক শিক্ষার্থীর মুখে খেলাধুলায় প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসের কথা শোনা যাবে। সবাই একসুরে বলবে মাদক, হতাশা ও সুস্থ সুন্দর জীবনের তাগিদে খেলাধুলার প্রয়োজন। যেটা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মাঝে লক্ষ্য করা যায়। সব মিলিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় খেলাধুলায় এক অনন্য নাম। এই ধারা অব্যাহত রাখলে ভবিষতে এই ক্যাম্পাস থেকে বের হবে আগামী বাংলাদেশের মুস্তাফিজ।
এসজে
মন্তব্য করুন