ঢাকাশনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আ.লীগের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন

‘বিএনপি সরকারের আমলে টাকার বিনিময়ে সরকারি চাকরি হতো’

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ০৭ আগস্ট ২০২৩ , ১১:১৭ পিএম


loading/img

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাকালে সরকারি কর্মচারীদের নিয়মিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে আয়োজন করা হচ্ছে বিসিএস পরীক্ষা। এরই অংশ হিসেবে চলতি মাসে প্রকাশিত হয় ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল, যেখানে ২৫২০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে পিএসসি। এ ছাড়া পদ খালি থাকা সাপেক্ষে নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য ৯ হাজার ৮২১ জন প্রার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞাপন

মেধাবীদের সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণের জন্য সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকা কালে পিএসসির করুণ চিত্র আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ওয়েব সাইটে তুলে ধরে। সেই তথ্য প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও।

সেখানে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় পিএসসিকে ব্যবহার করে বিসিএসসহ সব নিয়োগে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে ব্যাপক নিয়োগবাণিজ্য করা হয়েছে। ফলে সারাজীবন ভালো ফলাফল করেও চাকরি জোটাতে ব্যর্থ হয়েছেন অনেক সাধারণ পরিবারের সন্তান। আর এখন শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, প্রতি বছর লেখাপড়া করে নিজ যোগ্যতায় চাকরি পাচ্ছে লাখ লাখ সাধারণ শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে একটি চাকরির জন্য প্রয়োজন হতো ৩ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

ছাত্রদল অথবা শিবিরের দলীয় পরিচয় থাকলে অবশ্য কিছুটা ডিসকাউন্ট থাকতো। পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য করায় সাধারণ পরিবারের মেধাবীরা পড়েছিলেন দুর্ভাগ্যে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরই অভিযান চালিয়ে স্বচ্ছ করেছে পিএসসিকে। ফলে এখন মেধা অনুসারে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরি পাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠনের পরপরই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয়করণ শুরু করা হয়। এমনকি পিএসসির মতো প্রতিষ্ঠানকেও দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিণত করে তারা। ২৪তম বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার ভাইভার রেজাল্টও বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি সমকালের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব দুর্নীতির নথিপত্রসহ বিভিন্ন প্রমাণ উঠে আসে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদন অনুসারে, পিএসসির সদস্য হিসেবে ১০ জনকে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর তাদের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন তারেক রহমান। এ ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে হাওয়া ভবন ও পিএসসি সদস্যদের ‘কন্ট্রাক্টম্যান’ হিসেবে কাজ করতো ২৫তম বিসিএসের দায়িত্বপ্রাপ্ত পিএসসির সদস্য অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের আপন ভাই মামুনুর রশিদ। সে নিজে জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদের এপিএস হিসেবে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং এনজিও ব্যুরোতে কাজ করতো। তারেক রহমানের আজ্ঞাবাহ পিএসসি চেয়ারম্যান জেডএন তাহমিদা বেগমের সঙ্গে লিঁয়াজো রক্ষা করতো এই মামুন।

বিজ্ঞাপন

এই মামুনের ব্যক্তিগত ডায়েরি থেকে উঠে আসে অর্থ লেনদেনের প্রকৃত চিত্র। সেখানে দেখা যায়, টাকা লেনদেনের হিসেব ও নেতাদের সুপারিশ ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখতো মামুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তা পরে ধরা পড়ার পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। এদিকে অভিযোগ মেলে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় শুনলেই ভাইভা বোর্ড থেকে প্রার্থীকে বের করে দিতেন আরেক পিএসসি সদস্য ও সাবেক যুগ্ম-সচিব মোজাম্মেল হক।

২৭তম বিসিএস বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত পিএসসির আরেক সদস্য আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি পিএসসির একজন সহকারী পরিচালক ও নিজের পিও এর মাধ্যমে লেনদেন করতেন বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তার রেফারেন্স দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক প্রার্থী আগে থেকেই এএসপি হবে বলে এলাকায় বলে বেড়াতো এবং শেষ পর্যন্ত সে এএসপি পদে নিয়োগও পায়। এই নিয়োগে ২১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়।

শিক্ষা ক্যাডারের জন্য ঘোষিত ২৬তম বিশেষ বিসিএসের অধিকাংশ নিয়োগে গড়ে পাঁচ লাখ টাকা করে লেনদেন এবং বিএনপি-জামায়াত দলীয় ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় মার্কশিট বদল করে নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়া এবং ভাইভায় বেশি নাম্বার দেওয়ার মাধ্যমে এই দুর্নীতি করা হতো। এছাড়া তারেক রহমানের তালিকা ধরে শুধু বগুড়া ও আজিজুল হক কলেজ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে ২৫ জনের অধিক ব্যক্তিতে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার মতো কাজও করে বিএনপি-জামায়াত আমলের পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। দেশে এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা এর আগে বা পরে আর কখনোই ঘটেনি।

শুধু শিক্ষা নয়, চিকিৎসক নিয়োগ ও প্রমোশনেও হস্তক্ষেপ করে তৎকালীন পিএসসি চেয়ারম্যান তাহমিদা বেগম। বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের নেতা ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের মাধ্যমে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং স্বাস্থ্য-চিকিৎসা খাতে চলে দুর্নীতি-লুটপাট। ২০০৭ সালের ২৪ মার্চ প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৫ সালের ১৭ মে ও ১৯ সেপ্টেম্বর, এরপর ২০০৬ সালের ২৮ মে এই তিন দফায় মোট ৫০০ চিকিৎসককে দলীয় বিবেচনায় সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ এবং পদোন্নতি দেওয়া হয় বিএনপি সরকারের সময়। এ সকল নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএমডিসি নির্ধারিত যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা এবং স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ- কিছুই ছিল না তাদের। শুধু হাওয়া ভবনের সুপারিশের কারণে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ থেকে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান এই চিকিৎসকেরা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ক্ষমতার শেষের তিন মাসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করে বিএনপির এমপি-মন্ত্রীরা। এ সময় দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা, স্কুল-কলেজ ও পুলিশে ২০ হাজারের অধিক নিয়োগ দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট। ২০০৬ সালের ১৯ জুলাইয়ের দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা থেকে এসব তথ্য জানা যায়। এমনকি পিএসসির মাধ্যমে রাতারাতি ৩০০ পদধারী ছাত্রদল নেতাকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ভোট জালিয়াতি করার চেষ্টা করেছিলেন বলেও অভিযোগ মেলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। যদিও শেষ পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হলে এর কিছুই করতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত জোট।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |