আট বছর আগে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার নিয়ম চালু করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু এখন সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে ক্ষমতাসীন দলটি। এর পেছনে তৃণমূলের কোন্দল মেটানো ও নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার (উপজেলা) (সংশোধন) বিল-২০১৫ পাস হওয়ার পর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হয় উপজেলায়। তারপর থেকে সব স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করায় আগের চেয়ে গত দুই দফায় নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে। সহিংসতায় শীর্ষে ছিল সরকারি দলের প্রার্থীদের অনুসারীরাই। ফলে সহিংসতার দায় পড়েছে আওয়ামী লীগের ওপর। তাই এবার আর দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিয়ে সহিংসতার দায় নিতে চায় না ক্ষমতাসীন দলটি। পাশপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও স্বতস্ত্র প্রার্থিতা ‘উন্মুক্ত’ রাখতে চাচ্ছে দলটি। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পাশপাশি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিভেদ কমানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। এর ফলে জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের বিজয়ী হয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে করে আগামীতে তৃণমূল পর্যায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা সহজ হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলে তৃণমূল পর্যায়ে সহিংসতা কমে আসবে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, স্থানীয় নির্বাচনের কারণে অনেক সময় নৌকার যারা সমর্থক তারাও নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দেয়, এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ভোট না করা এটা একটা কারণ। আবার নিজেদের মধ্যে সহিংসতাও বাড়ে। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখাসহ বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ২২ জানুয়ারি গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সেসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রতীক নৌকা ব্যবহার করা হবে না। নৌকা না দেওয়ার জন্য ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এখন অভিমত পেশ করেছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার অভিমতের সঙ্গে তিনি ভিন্নমত প্রকাশ করেন না।
তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, শুধু উপজেলা নয়, আগামীতে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনো পর্যায়ে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী মার্চে অনুষ্ঠিতব্য ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যমতে, আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আগামী ১০ মার্চ পবিত্র মাহে রমজান শুরু হবে। কমিশনের অনুমোদনক্রমে রোজা শুরুর আগেই উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোট হতে পারে। সারাদেশে ৪৮৫টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনযোগ্য হয়েছে। সেই অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুতি নিয়েছে।