বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট সংসদে ঘোষণা করা হয়েছে। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংকটের এই সময়ে গণমুখী বাজেট হয়েছে। বিএনপির নেতারা বলছেন, বাজেটে লুটের নতুন পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংকটে গণমুখী বাজেট হয়েছে, বাস্তবসম্মত হয়েছে। দলের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার ও অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় নিয়ে বাজেট দেওয়া হয়েছে। দলের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার ও অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় নিয়ে বাজেট দেওয়া হয়েছে। কারও প্রেসক্রিপশন মেনে বাজেট প্রণয়ন হয়নি। বাস্তবসম্মত হয়েছে এই বাজেট।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট লুটের নতুন পরিকল্পনা। প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের ওপর আরও বোঝা চাপাবে। এই বাজেট লুট করার জন্য। বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। ব্যাংক ও বিদেশিদের ওপর ঋণ আরও বাড়বে। শুধু তাই নয়, বাজেটের সঙ্গে সবকিছুর দাম আরও বাড়বে। পুরো বাজেট বাংলাদেশ বিরোধী বাজেট। এখানে জনগণের জন্য কিছু নেই। নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগও নেই।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বাজেট ভালো হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভালো বাজেট। ব্যবসায়ীরা এতে কী প্রতিক্রিয়া দেয় তা দেখবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, নতুন বাজেট প্রক্রিয়া হচ্ছে দেশের দরিদ্র মানুষকে শোষণের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সাজানো একটি হাতিয়ার। এই বাজেট সরকার কর্তৃক জনগণকে নিয়ে আরও একটি করুণ ও হৃদয়বিদারক প্রতারণা। আওয়ামী লীগ অন্যায়ভাবে গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে আছে। কাজেই দেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণে এই সরকারের কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘যেসব উন্নয়ন এর আগে হয়েছে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে কোথায় যেতে চাই আমরা, তা ভেবেই বাজেট তৈরি হয়েছে। যারা প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাজেট দিতো, তারাই বিদেশি প্রেসক্রিপশনে বাজেট হয়েছে বলে সমালোচনা করছেন।’
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) শর্ত পূরণ করেই সরকার প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে।
আমি খুব একটা আশাবাদী হইনি এই বাজেট দেখে। বর্তমান যে বাস্তবতা, সেই বাস্তবতায় সংকট নিরসনে; জনজীবনে যে সংকটগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত বিবরণীতে কী আছে আমি জানি না। কারণ, আমরা সংক্ষিপ্ত বিবরণী দেখেছি।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘অনেক কিছুর ওপর থেকে ট্যাক্স কমানো হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য এই বাজেট বেশ উপকারী হবে।’
সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (কল্যাণ পার্টি) বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি এই বাজেটে বাড়বে, এটার কোনো নিশ্চয়তা বা আশঙ্কা নেই। মানুষের ওপর চাপ পড়বে, এটা স্বাভাবিক। তবে পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে সংকট কমবে।
এর আগে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল ৩টায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এবারের বাজেট সবচেয়ে বড় আকারের বাজেট। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের (২০২৪-২৫) বাজেটের আকার বাড়ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট।
বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা বেশি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে দুই লাখ ৮৩ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। পরে এটি সংশোধন করে সাত লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়।
মন্তব্য করুন